তিন্নি দে; আলিপুরদুয়ারঃ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে সারা বিশ্বের আকাশ থেকে হারিয়ে যাওয়া হোয়াইটব্যাকড প্রজাতির শকুন ছাড়া হবে । বুধবার রাজাভাতখাওয়াতে এসে একথা জানালেন বন্যপাণ শাখার মূখ্য বনপাল ।বুধবারের পড়ন্ত বিকেলে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া প্রকৃতিবিক্ষণ কেন্দ্রে উদ্বোধন হ’ল পঞ্চম বর্ষ বক্সা বার্ড ফেস্টিভ্যালের।এক ঝাঁক পাখি বিশেষজ্ঞ ও পাখি প্রেমীদের উপস্থিতিতে ওই পাখি উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্যবনপাল বিনোদ কুমার যাদব।
উৎসব চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।এবারের পাখি উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন দেশ ও রাজ্যের মোট ৩৬ জন পাখি প্রেমী।কোভিড পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের পাখি উৎসবে বিদেশী পাখি প্রেমীরা অংশগ্রহণ করার কোনো ঝু্ঁকি নেননি।বনদপ্তরের নথি অনুসারে শিকারী পাখিদের স্বর্গ রাজ্য বলে পরিচিত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ৫৪০ প্রজাতির সন্ধান মিলেছে।গত বছরের পাখি উৎসবে লেন্সবন্দী হয়েছিল মোট ২১৬ প্রজাতির নানান ধরনের পাখির ছবি।যাদের মধ্যে ছয়টি প্রজাতির পাখির সন্ধান প্রথমবার মিলেছিল বক্সায়।
পাখি বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী যে চলতি পাখি উৎসবে আরও সমৃদ্ধ হবে বক্সার পাখির সারণী।কোভিড আতঙ্কে প্রকৃতিতে দূষণ অনেকটাই কমে যাওয়ার দরুন আদর্শ পরিবেশ পেয়ে ইতিমধ্যেই বক্সার বিভিন্ন পখিরালয় গুলিতে ভিড় জমিয়ছে প্রচুর পরিমানে পরিযায়ী পাখি।হালে জাতীয় জলাশয়ের তকমা মেলা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের নারারথলি বিলে স্পটেড ডাকের মত বিরল প্রজাতির বুনো হাঁসেরও দেখা মিলেছে।এছাড়াও ঝাঁকে ঝাঁকে ব্ল্যাক আইবিসের মতো পাখিরাও আস্তানা গেড়েছে বক্সার জঙ্গলের কোনায় কোনায়।
উৎসবে যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পাখি বিশেষজ্ঞ ধৃতিমান মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন “পাখি উৎসব আদতে মানুষের সাথে হরেকরকম পাখির এক অদ্ভুত মেল বন্ধন তৈরি করে।পাখিরাও যে প্রকৃতির অন্যতম বাহার ও সম্পদ তা পাখি উৎসবের মধ্য দিয়েই বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়।এখানেই পাখি উৎসবের স্বার্থকতা।”
“উৎসবের শেষ দিনে ৯ জানুয়ারি রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে বিশ্বের আকাশ থেকে হারিয়ে যেতে বসা এক জোড়া হোয়াইটব্যাক্ড প্রজাতির শকুনকে উপগ্রহ নিয়ন্ত্রিত ট্রান্সমিটার ট্যাগ পড়িয়ে প্রকৃতিতে ছাড়া হবে।সঙ্গে ছাড়া হবে আরও আটটি হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুন” ।
এছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আরো দশটি শকুন ছাড়া হবে বলে জানান রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপাল বিনোদ কুমার যাদব।প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত চলবে জঙ্গলের নির্দিষ্ট পাঁচটি রুটে পাখি খোঁজার পালা।তারপর রাজাভাতখাওয়ার ক্যাম্পে ফিরে তৈরি করা হবে চেক লিস্ট।
নবীন পাখিপ্রেমী কলকাতার রঞ্জনা সাহা জানিয়েছেন “মন থেকে পাখিদের ভালোবাসি।সেই টানেই এই সবুজের সমারোহে ছুটে এসেছি।আশা করছি নতুন কিছু চোখে পড়বেই।”