নিজস্ব সংবাদদাতা: জারি হয়েছে আমফানের কড়া সতর্কতা। আগামী ১৯ মে অবধি সমুদ্রে যাওয়া বারন। শুধু বাতাসে নয় সমুদ্রের তলদেশেও চলছে আলোড়ন। যেন সমুদ্র মন্থনে অস্থির বাসুকি নাগ ফেনা তুলছে আর গেজার মত ছড়িয়ে পড়ছে দিঘার তটে। গত কয়েকদিন এই দৃশ্য দেখার পর গুজব ছড়িয়েছে দিঘায় যে এই ফেনা আসলে আমফানের আগামী কয়েকঘন্টার মধ্যেই যার ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা সমুদ্র উপকূলে। ঘটতে চলেছে প্রলয়।
অনেকটা বরফের চাঁইয়ের মত সমুদ্রের পাড়ে ভেসে আসে ফেনা স্তূপাকারে জমছে সৈকতের বুকে। যার কিছুটা আবার বাতাসেও উড়ে বেড়ায় পেঁজা তুলোর মতো। শুক্রবার রাতে জোয়ারের সময় এমন দৃশ্যই দেখা গিয়েছিল দিঘার সমুদ্রে যা এখনও দেখা যাচ্ছে। যদিও এখন কিছুটা কম।
গুজবটি উড়িয়ে দিচ্ছেননা সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের। বিজ্ঞানীদের কথায়, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। জলের তলদেশে মোচড় দিচ্ছে স্রোত যাকে বলে স্ক্রলিং। আঁচড় কাটা বালির সঙ্গে সমুদ্রের নোনাজল তৈরি করছে রাসায়নিক বিক্রিয়া। আর ওই প্রবল স্ক্রলিং ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সে আসছে। সমুদ্রে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যা বেশি ঘটে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য। কিন্তু দুর্যোগ এর আগেও হয়েছে, ফেনা তো হয়নি! বিজ্ঞানীরা বলছেন, হবে কী করে, এমন দূষনহীন পরিবেশ, নির্মল বাতাস আগে ছিল কী? এখানেও লকডাউন এফেক্ট!
হ্যাঁ, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। যার প্রভাবেই দিঘার সমুদ্র ফেনা তুলেছে বলে জানিয়েছেন, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও সমুদ্র বিজ্ঞানী আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। এতে দূষণের প্রভাব যেমন নেই, তেমনি কোনও বিপদ আশঙ্কাও নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। সমুদ্রের তলায় থাকে সেডিমেন্ট অর্থাৎ বালি, কাদা। তাতে থাকে জৈব পদার্থ।
আনন্দদেববাবুর ব্যাখ্যা,’ দুর্যোগ আবহের কারণে অনেক সময় সমুদ্রে স্রোতের আবর্ত বা ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। উথালপাথাল হয় ঢেউ। এই মন্থনে সমুদ্রের তলদেশের বালি-মাটি থেকে বেরিয়ে আসে দ্রবীভূত জৈব পদার্থ। যার ফলে তৈরি হয় এই ফেনা। আর জলে সোডিয়াম বাই কার্বনেটের উপস্থিতির জন্য ফেনা দেখায় সাদা।’ দিঘার মেরিন অ্যাকোয়ারিয়ামের আধিকারিক বিজ্ঞানী শ্রীনিবাসন বালাকৃষ্ণান বলেন, ‘সমুদ্রের ঢেউ পাড়ে বা সৈকতে ধাক্কা দিলে কিংবা জলোচ্ছ্বাসের সময় ফেনা তৈরি হয়। তবে সেই ফেনা সমুদ্রে ফিরে যায় জলের সঙ্গে। স্তূপাকারে জমে থাকে না সৈকতে।’
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার পর থেকে ওল্ড থেকে নিউ, পুরো দিঘাতে সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে আচমকা ভেসে বেড়াতে দেখা যায় এই ফেনা। তুলোর মতো একেবারে ধবধবে সাদা রঙ। লকডাউনের কারণে সমুদ্র উপকূলের মানুষ ছাড়া যা নজরে আসেনি কারও। স্থানীয় বাসিন্দা মিলন রায়, সূর্য পাত্ররা রাতে ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছিলেন সমুদ্র পাড়ে। তাঁরা বলেন, গার্ডওয়ালের ওপর উঠতেই নজরে আসে সাদা তুলোর মতো ফেনা ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ সৈকতজুড়ে। বাতাসেও উড়ছিল ফেনা। সমুদ্রের এমন রূপ দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমরা।’ সমুদ্রের জলে হঠাৎ করে এমন পরিবর্তনের কারণ নিয়ে, শনিবার পেরিয়ে রবিবারও দিনভর চর্চা চলে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে এদিন সকাল থেকে আর দেখা যায়নি শুক্রবার রাতের ফেনা তোলার দৃশ্য।
দিঘা অ্যাকুইরিয়ামের অন্যতম আধিকারিক তথা সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রসাদচন্দ্র টুডু বলেন, “এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আগে সমুদ্রের ঢেউ বা রোলিং কম ছিল। তাই ফেনা কম উৎপন্ন হত। এখন সমুদ্রের জলের সার্কুলেশন অনেক বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বেড়েছে সমুদ্রের উপরে বাতাসের গতিবেগ। তাই তুলনায় অনেক বেশি ফেনা বেড়েছে। যা নজরে আসছে এখন।’’