নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলার সমুদ্র উপকূল বরাবর দিঘা, বকখালি, ডায়মন্ড হারবার, শঙ্করপুর, মন্দারমনিতে সতর্কবার্তা জারি করা হল বৃহস্পতিবার। মাইকিং করে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করে দিয়ে সমুদ্র যাত্রার নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ব্যাপক ঝড়বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মহাসপ্তমী বা শুক্রবার বিকেলে রাজ্যে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই নিম্নচাপের। এই মর্মে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জারি করা হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা।
জানা গেছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ। ইতিমধ্যেই তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে তা পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা। ইতিমধ্যেই সমুদ্রের অশান্ত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা সমুদ্র আরও উত্তাল হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “গতকালের সুস্পষ্ট নিম্নচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এই মুহূর্তে তা কলকাতা থেকে ৩৫০ কিমি দক্ষিণ- দক্ষিণ পূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৪৯০ কিমি দক্ষিণ- দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে। নিম্নচাপের এই মুহূর্তের অবস্থান উত্তর- পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ১৮.৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা বরাবর।”
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরে তা উত্তর উত্তর- পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে অতি গভীর নিম্নচাপ হিসেবে ২৩ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অতি গভীর নিম্নচাপের ফলে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই ২২ ও ২৩ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে বলে আলিপুরের তরফে জানানো হয়েছে। বেশি বৃষ্টি হবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। ২২ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং উপকূলের কাছের জেলা অর্থাৎ কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়ায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আলিপুরের পূর্বাভাস।
শুধুমাত্র ভারী বৃষ্টি নয়, ঝোড়ো হাওয়াও বইবে এই দু’দিন। সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২২ ও ২৩ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতি ও শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝড় বইতে পারে। এছাড়া ২৩ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলিতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝড় বইতে পারে।
এদিকে পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ ও পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘাতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনও রকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে তারা। এছাড়া প্রতিটি জেলাশাসক ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুজো কমিটিগুলিকে আগে থেকে বলে রাখার জন্য যে ঝড়ে যাতে মণ্ডপের ক্ষতি না হয় সেই বিষয়ে আগে থেকে তারা যেন বন্দোবস্ত রাখে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনের তরফে মাইকে করে এই সময় কাউকে বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
একই সাথে অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডে ২২ ও ২৩ অক্টোবর দুদিন টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর জেরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০৪.৪ মিমির কাছাকাছি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এদিকে এই মূহুর্তে আবহাওয়ার যা পরিস্থিতি তাতে আগামী ২২ অক্টোবর মৎস্যজীবীদের পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ একই সাথে ২২ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর রাত পর্যন্ত আগামী তিনদিন পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলবর্তী গভীর সমূদ্রে মৎসজীবীদের না যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হওয়া অফিস।