নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলেছে বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে। আর তারই জেরে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শহর থেকে গ্রাম। শহরের মধ্যে যেমন নিচু জায়গাগুলি জলে প্লাবিত হয়ে গেছে গ্রামাঞ্চলে তেমনই নদী নালা খাল বিল জলে টৈ-টম্বুর। জেলার একাধিক জায়গায় সাঁকো ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বিশেষ করে ঘাটাল, দাসপুর, গড়বেতা থেকে এরকমই খবর এসেছে।
খড়গপুর শহরে খরিদা ও মালঞ্চর উত্তরপ্রান্ত কার্যত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জল জমেছে ইন্দা নিউটাউন, আনন্দনগর ইত্যাদি এলাকাতে। খরিদা শ্রীকৃষ্ণপল্লী এলাকার একটি অংশ পুরোপুরি জলমগ্ন। সুভাষপল্লী, ভাবনীপুরের পেছনে মাঠপাড়ার দিকে ব্যাপক জল জমার খবর পাওয়া গেছে। মালঞ্চর উত্তরে উটপুকুর, চণ্ডীপুরের একাংশের রাস্তাঘাট জলে ডুবে গিয়েছে। খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন আরামবাটি ও দেওয়ানমাড়ো এলাকার মানুষজন। ওই এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় সমস্ত রাস্তাই জলের তলায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জমা জলে বিপর্যস্ত ঝুলি, সোনামূখী, গোপালনগর ও তলজুলির একাংশ।
অন্যদিকে মেদিনীপুর শহরের ধর্মা, হবিবপুর, কুইকোটার একাংশ এলাকা টানা দুদিনের বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। ধর্মার রামকৃষ্ণ নগর ও বিবেকানন্দ নগরের একাংশ বাড়ি থেকে বেরুতে পারছেননা কারন পৌরসভা নিকাশি ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত না করায় এলাকা থেকে জল সরতেই পারছেনা। যে পরিমান বৃষ্টি দুদিন ধরে হয়ে চলেছে তার জল জমে রয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। পাটনাবাজার ও জুগনূতলা, কালগাঙ লাগোয়া অরবিন্দনগর ও নরমপুর মৌজার একাংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
শহরে যখন এই অবস্থা তখন গ্রামের অবস্থা আরও কাহিল বলাবাহুল্য। খুবই খারাপ অবস্থা ঘাটাল মহকুমার। দীর্ঘদিন ধরে মেরামতির অভাবে চলতি মরশুমে কয়েকটি সাঁকো ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দুপারের মানুষ। বুধবার রাতেই ভেঙে পড়েছে ঘাটাল মহকুমার সাথে হুগলি জেলার সংযোগকারী একটি সাঁকো ভেঙে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন দুই জেলার মানুষ। রূপনারায়ন নদের ওপর দাসপুরের কৈজুড়ি এলাকার এই সাঁকোটি ওপরের হুগলি জেলার মাড়োখানার সঙ্গে যুক্ত ছিল। হুগলির মধ্যে দিয়ে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া যেত হাওড়া জেলাতেও। মিলন সেতু বলে পরিচিত সাঁকোটি ভেঙে বিপাকে দুই পাড়ের মানুষ।
ওদিকে গড়বেতা ১ ব্লকের সন্ধিপুর অঞ্চলের রাজবল্লভপুরে শিলাবতী নদীর উপর বাঁশের সাঁকো জলে ভেসে যায় কাল রাতে। ফলে মানুষের ভোগান্তি। বৃহস্পতিবার নৌকায় পারাপার চালু হলেও নৌকায় ওঠানামার জন্য এখনো সিঁড়ি তৈরি হয়নি। দড়ি ধরে লোকজন ওঠানামা করছে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাতায়াত।
এদিকে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে মেঘলা আকাশ থাকবে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে।
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে কয়েক পশলা হালকা মাঝারি বৃষ্টি হবে আজ। আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদিয়া, কলকাতায়। দু-এক পশলা অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে এই জেলাগুলির কোথাও কোথাও। শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি এবং বাঁকুড়াতে।
কারন হিসাবে বলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও সংলগ্ন বিহারে রয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। পাঞ্জাব থেকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা ওপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি বিহার,ঝাড়খন্ড এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে গিয়েছে। এরই সঙ্গে বাংলাদেশ সংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। এর প্রভাবেই বৃষ্টি কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এই অঝোর বৃষ্টি চলছে। নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের জেরে সমুদ্র উত্তাল থাকবে, ফলে আজ মৎস্যজীবীদের সমুদ্র যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দপ্তর।