নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির পথে দেশ, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে একটি গ্যাস উৎপাদন কারখানার পাইপ ফুটো হয়ে টন টন গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের গ্রাম গুলিতে। ঘটনায় ২ হন বৃদ্ধ ও এক নাবালিকা সমেত ৮ জনের ইতিমধ্যেই মৃত্যুর খবর মিলেছে। ৩ কিলোমিটার ব্যসে ছড়িয়ে পড়া ওই মারন গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৫ হাজার মানুষ। অন্তত ৫টি গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে। বিশাখাপত্তনমের আরআর ভেঙ্কটাপুরমের এল.জি. পলিমার ইন্ডাস্ট্রি নামক একটি রাসায়নিক কারখানায় ঘটনাটি ঘটেছে গোপালপত্তনমের কাছে নাইডু থোটা এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৩ টা নাগাদ।
ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে পথে ঘাটে পড়ে শয়ে শয়ে মানুষ। অনেকেই অচেতন, অনেকে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় ধুঁকছেন। ঘরের ভেতর দমবন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরা হয়ত মুক্ত বাতাস নিতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে ছিলেন। কেউ পড়ে আছেন বাইক নিয়ে, হয়ত গ্যাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে বাইক চালিয়ে দুরে পালাতে চেয়েছিলেন। কাউকে আবার দেখা গেছে গ্যাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। অসহায় অবস্থায় ছটপট করতে দেখা গিয়েছে গৃহপালিত জীব, রাস্তার কুকুর এমনকি পাখিদের।
ভিডিওতে দেখা গিয়েছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছেন অনেকে। নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকটি দেহ। মৃত্যু হয়েছে অনেক গরু, মোষেরও।। উল্লেখ্য ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিন্দুস্তান পলিমার্স। তারপর ১৯৭৭ সালে কোরিয়ার সংস্থা এলজি কেমিক্যাল অধিগ্রহণ করে কারখানাটি। নাম হয় এলজি পলিমার্স। আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ট্যাঙ্ক থেকে গলগল করে গ্যাস বেরোতে দেখা গিয়েছে। বৃহত্তর বিশাখাপত্তনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন পুরসভার বিভিন্ন ভবনে স্থানীয় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে।
ঘটনার পরই উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগমোহন রেড্ডির সঙ্গে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী ট্যুইট বার্তায় মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। বিশাখাপত্তনম বা ভাইজ্যাগের জেলাশাসক বি বিনয়চাঁদ ছুটে গেছেন ঘটনাস্থলে। ১২৮ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় কেজি হাসপাতালে যার মধ্যে ৯৮ জন নিরাপদেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন হয়ত মৃত্যুর সংখ্যা আর নাও বাড়তে পারে। অন্য একটি মতে অন্তত ১হাজার মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গোটা ঘটনায় দেশবাসীর সামনে ফিরে এসেছে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি। ১৯৮৪ সালের ২রা ডিসেম্বর সেই অভিশপ্ত রাতে সরকারি ভাবে ৩৭৮৭ জনের মৃত্যু হয় যদিও বেসরকারি ভাবে ১৬হাজার মৃত্যুর দাবি করা হয়।