Homeএখন খবরঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো অরিন্দমের হাত ধরেই এবার বাঙালি খাবে বিদ্যাসাগরের...

ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো অরিন্দমের হাত ধরেই এবার বাঙালি খাবে বিদ্যাসাগরের গাছের আম

বিরসিংহে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটার দায়িত্বে রয়েছেন দিলীপ ব্যানার্জী। তাঁর হাতে  আম গাছের চারা তুলে দিচ্ছেন অরিন্দম

নিজস্ব সংবাদদাতা: বছরে একটা দিন উদযাপনের মধ্যেই বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম, সুকান্ত, নজরুলকে মনে রাখে বেশিরভাগ বাঙালি। তারপর সব ভুলে যাওয়া। কিন্ত একেকজন বড় নাছোড়বান্দা, ভুলতে চাইলেও ভুলতে দেয়না মানুষকে। এরা একদিনের ক্ষুদিরামকে বছরভর টেনে রাখেন নানান কর্মকান্ড দিয়ে আর অদ্ভুত সেই কর্মকাণ্ডের নাম অরিন্দম ভৌমিক।বিদ্যাসাগরের ২০০বছর জন্মবার্ষিকীতে অরিন্দমের ভাবনা আম বাঙালিকে বিদ্যাসাগরের নিজের হাতে লাগানো গাছের আম খাওয়াবেন। আর সেই আমগাছটি রয়েছে বাংলা থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দুরে ঝাড়খণ্ডের কর্মাটাঁড়ে। এ্যাই তো মনে পড়ে গেল নিশ্চই যে ১৮৭১ থেকে ১৮৭৩ সালের মধ্যে কোন এক বছর বিদ্যাসাগর শান্তির খোঁজে চলে গিয়েছিলেন বর্তমান ঝাড়খণ্ডের কর্মাটাঁড়ে। অনেক দুঃখ বুকে নিয়ে ছেড়েছিলেন বীরসিংহ গ্রাম। প্রায় ১৮ থেকে ২০ বছর কাটিয়েছিলেন কর্মাটাঁড়ে।হ্যাঁ, সেই কর্মাটাঁড়ে তাঁর স্মৃতিচিহ্ন রূপে রয়েছে তাঁরই নিজের হাতে লাগান একটি আমি গাছ। স্থানীয় মানুষজন এখনও এই আমগাছটির আম নিয়ে যান প্রসাদ হিসেবে। অরিন্দমের ভাবনা সেই প্রসাদ এবার পৌঁছে যাক বাঙালির ঘরে ঘরে।  আর সেই কারনে এক অভিনব ভাবনায় অরিন্দম আর তাঁর  ‘মিডনাপুর ডট ইন (midnapore.in)’।

The Kharagpur Post

বিদ্যাসাগরের কর্মাটাঁড়ের বাড়িতে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে অরিন্দমকে বিদ্যাসাগরের লাগানো আম গাছের আম তুলে দিচ্ছেন শ্রী এস এন সিনহা (কোষাধ্যক্ষ)। অরিন্দম জানিয়েছেন, ‘আজ আর বিদ্যাসাগরের মান ভাঙিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁকে আজ আমাদের সমাজের খুবই প্রয়োজন। তাই তাঁকে তাঁর দ্বিশতবর্ষের জন্মদিনে একটু অন্যভাবে ফিরিয়ে আনতে মে মাসে পৌঁছে গিয়েছিলাম কর্মাটাঁড়ে। তখন সেই আম গাছে আম পেকেছে। নিয়ে এলাম সেই আম ও গাছের ডাল, তৈরী করলাম চারা।’জানা গেছে আগামী ২৬সে সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের জন্মদিনে সেই চারাগাছ লাগানো হবে বীরাসিংহে তাঁর জন্মভিটায় এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে (বীরাসিংহে তাঁর জন্মভিটায় চারাগাছটি সম্ভবত ২৪ তারিখ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লাগাবেন)। পরবর্তীকালে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলিতেও লাগানো হবে ওই আমগাছ। আর এভাবেই বাংলা জুড়ে বিদ্যাসাগরের নিজের হাতে লাগানো আমগাছের উত্তরাধিকার ছড়িয়ে দিতে চান অরিন্দম।

The Kharagpur Post

সেই আমের চারা লাগাবে  ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ও।  ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী সুব্রত মাইতি। এরই পাশাপাশি বীরাসিংহ ও কর্মাটাঁড় বা বলা যেতে পারে বাংলা আর ঝাড়খণ্ডের মধ্যে সেতু বাঁধতে অন্য একটি উদ্যোগ নিয়েছেন অরিন্দমরা । বীরসিংহে রয়েছে বিদ্যাসাগরের লাগান একটি বিশাল কাঠবাদামের গাছ। সেই গাছের চারাও তৈরী করেছেন অরিন্দম । একই দিনে অর্থাৎ ২৬সে সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের জন্মদিনে বাইক-রেলি করে ওই কাঠবাদামের চারাগাছ নিয়ে গিয়ে বিকেল বেলায় লাগান হবে তাঁর কর্মাটাঁড়ের বাড়িতে।অরিন্দম জানান, ‘২৬সে সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় মিডনাপুর ডট ইনের ১৪ সদস্যের একটি দল মেদিনীপুর থেকে বাইক নিয়ে রওনা দেবে বীরসিংহ। সেখানে পৌঁছে ২০০ টি মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটা হবে, সবাইকে খাওয়ান হবে জন্মদিনের পায়েস, চালান হবে তাঁর জন্য রচিত নতুন চারটি গান। বীরসিংহ থেকে বেরিয়ে আমরা রওনা দেব কর্মাটাঁড়ের উদ্যেশে। বিদ্যাসাগরের জন্য সঙ্গে নিয়ে যাব ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা, মেদিনীপুরের ক্ষিরগজা, ছাতনার পেড়া ও বাঁকুড়ার মেচা। যাত্রাপথে রোপন করা হবে ২০০ টি চারাগাছ, প্রচার করা হবে তাঁর কর্মকান্ডের কথা। বিকেলবেলায় কর্মাটাঁড় পৌঁছে লাগান হবে সেই কাঠ বাদামের গাছ এবং ২০০ টি মোমবাতি জ্বালিয়ে কাটা হবে আরেকটি কেক।”
অরিন্দমদের এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে  বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা কমিটি (নন্দনকানন), বিহার বেঙ্গলি এসোসিয়েশন ও ঝাড়খন্ড বেঙ্গলি এসোসিয়েশনের সদস্যরা।

The Kharagpur Post

বিদ্যাসাগরের লাগানো  কাঠ বাদাম গাছের চারা যাবে
কর্মাটাঁড়ে, দিচ্ছেন বিরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী শক্তিপদ বেরা। কিছুদিন আগেই ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবসে মোজাফফরপুর আর ক্ষুদিরামের স্মৃতি বিজড়িত পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহবনী আর হবিবপুরকে একত্রে বেঁধেছিলেন অরিন্দমরা। সেখানকার চিতাভস্ম আর এখানকার জন্মভিটার মাটি আদান প্রদান করেছিলেন। সেই মাটিতেও লাগানো হয়েছে চারাগাছ। ‘সবুজ ক্ষুদিরাম’ নামের সেই শতশত চারা লাগানো হয়েছে স্কুলে স্কুলে। তারপর এবার বিদ্যাসাগর।বাঙালির এই প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষের নিজের হাতে লাগানো সেই স্মৃতিবিজড়িত আম গাছটির চারা আপনিও লাগাতে পারেন আপনার প্রাঙ্গনে। যোগাযোগ করতে পারেন অরিন্দমদের ওয়েবসাইট মারফৎ। আপনার কাছে সেই চারা পৌঁছে দেবে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো অরিন্দমরাই।

RELATED ARTICLES

Most Popular