নিউজ ডেস্ক: হিমবাহ ফেটে উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে ভয়াবহ তুষারধস। চামোলি জেলার রেনি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় প্রবল এই ধসের মাত্রা । ধস হওয়ায় নদীর দুধারের গ্রাম খালি করার কাজ শুরু হয়েছে। নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ঋষিগঙ্গা বাঁধ ভেঙে গিয়েছে বলে খবর। ধসের ফলে প্লাবিত অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গা নদী। উত্তরাখণ্ড প্রশাসন সূত্রে খবর নিখোঁজ প্রায় দেড়শো জন। পিটিআই সূত্রে খবর দুই জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে আইটিবি সূত্রে খবর তিন জনের দেহ ইদ্ধার হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার তপোবন অঞ্চলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, বলে জানায় আইটিবিপি।
মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভেঙে যায় নন্দাদেবী হিমবাহ। তার জেরেই এত বড় বিপর্যয়, বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ধৌলিগঙ্গার দুটি নির্মীয়মাণ বাঁধে ফাটল ধরেছে, প্লাবিত হয়েছে জোশীমঠ। নন্দাদেবীর হিমবাহ ভেঙে গিয়ে বিপত্তি। ভেসে গিয়েছে দুটি সেতু। তুষারধস এসে আছড়ে পড়ে নির্মীয়মাণ ঋষিগঙ্গা ও তপোবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর। তপোবনের রাইনি এলাকায়, তুষারধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্প।
ধৌলিগঙ্গা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। চামোলি জেলার তপোবনেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বেশ কয়েকটি হিমবাহেরও ক্ষতি হয়েছে। আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার।
ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলার চারটি বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে। খালি করা হচ্ছে আশপাশের গ্রাম, নিরাপদ দূরত্বে সরানো হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। উদ্ধারকার্যে ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও ইন্দো-তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশের টিম।
উত্তরাখণ্ডে তুষার-বিপর্যয়ের বিষয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সমস্ত রকম সহায়তায় আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, মোতায়েন রাখা হয়েছে বায়ু সেনা। জারি করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর– হেল্পলাইন নম্বর : ৯১১৩৫২৪১০১৯৭। হেল্পলাইন নম্বর : ৯১১৮০০১৮০৪৩৭৫। হেল্পলাইন নম্বর : ৯১৯৪৫৬৫৯৬১৯০। পাশাপাশি, মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়াত। একইসঙ্গে ভুয়ো খবর প্রচার করা থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি জানান, রাজ্য ও জেলা প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করছে।
ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি উত্তরাখণ্ডের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে সারা ভারত। সবাই যাতে নিরাপদে থাকেন, তার জন্য সারা দেশ প্রার্থনা জানাচ্ছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছি এবং এনডিআরএফ দল মোতায়েন করা, উদ্ধারকার্য এবং ত্রাণের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি ট্যুইট করে লিখেছেন, ‘উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয় এবং মৃত্যুর ঘটনায় আমি শোকাহত। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের লোকজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’ সেইসাথেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, বিজাহের মুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সকলেই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন।
এই সময় পর্যটকদের ভরা মরশুম হরিদ্বার-হৃষিকেশে, সেখানেও গঙ্গার জলস্তর বাড়ার আশঙ্কা এই ঘটনার জেরে। দেরাদুনেও জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। বিষ্ণুপ্রয়াগ, জোশীমঠ, কর্ণপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ, ঋষিকেশ ও হরিদ্বারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার প্রায় আট বছর আগে ২০১৩ সালের ১৭ জুন, লাগাতার বৃষ্টির ফলে উত্তরাখণ্ডের চোরাবারি হৃদ উপচে হড়পা বান নেমে এসে উপত্যকা ভাসিয়ে দেয়। জলের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ কাদা-মাটি, পাথর মিশে তা প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে। হড়পা বানের পথে যা যা এসেছিল– মানুষ থেকে শুরু করে গবাদি পশু ও ঘরবাড়ী সবকিছু ভেসে যায়।
১৩-১৭ জুন লাগাতার বৃষ্টির ফলে চোরাবারি হিমবাহ গলে পড়ে। এর ফলে, মন্দাকিনী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। প্রবল গতিতে জল নেমে আসে। প্লাবিত হয় উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিম নেপালের একাংশ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেদারনাথ। বন্যায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি উস্কে এদিন ফের এই দুর্ঘটনা ঘটল।