নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী ৩ বছরে ৩৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের ঘোষণা করেছেন মূখ্যমন্ত্রী আর তাঁকেই কিনা ব্যঙ্গ করে হাতে ২০ টাকার মদের পাউচ আর চপ ভাজার স্টোভ (সবই প্রতীকি) নিয়ে বেলা ১১টা থেকে ১ টা, পাক্কা ২ ঘন্টা শহরের প্রাণ কেন্দ্র কেরানীতলা অচল করে দিলেন হাজার খানেক যুবক যুবতী। কেরানীতলার চৌমাথার আট লেন দখল উচ্চ শিক্ষিত যুবক যুবতীর দল প্রশ্ন তুললেন যদি ৩৫ লক্ষ কর্মসংস্থান করবেন তিনি বছরের পর বছর রাজ্যের স্কুল গুলিতে নিয়োগ করছেন না কেন? ঘটনা এটাও যে দু’ঘন্টা ধরে রাস্তা স্তব্ধ হয়ে গেলেও পথ চলতি অসুবিধায় পড়া মানুষের চোখে মুখে বিরক্তির বদলে লক্ষ্য করা গেছে সহমর্মিতার ভাব। কাজ ফেলে রাস্তায় বসা যুবক যুবতীদের পাশে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল শহরও।
রাস্তায় বসে থাকা বিক্ষোভরত যুবরা প্রশ্ন তুলেছেন, আর কত ভাঁওতা দেবে সরকার? সামনের তিন বছর ৩৫ লক্ষ চাকরির ব্যাবস্থা করবে। তার মানে ২০২১য়ে আর শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হবেনা। সরকারের নাকি টাকা নেই কিন্তু ক্লাবগুলোকে কয়েকশ কোটি টাকা দান খয়রাতি করতে পারে! ২০১৪ সাল থেকে নতুন করে কোনো নিয়োগের ব্যবস্থা হয়নি। উল্টে ৭ বছর ধরে আইনি জটিলতায় ঝুলে রয়েছে আপার প্রাইমারীর নিয়োগ। তার সংগে ফন্দিবাজ রাজ্য সরকার হঠাৎ করে নোটিফিকেশন দিয়ে ঘোষনা করেছে আগামী ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত কোনো নিয়োগের নতুন করে বিজ্ঞপ্তি হবে না।
বেঙ্গল প্লাটফর্ম ফর আনএমপ্লয়ীজ ( বি পি ইউ) এর ডাকে এবং প্রাইমারী, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রনীতে শিক্ষক পদ পার্থী বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে সংগঠনের নেতা সৌমিত্র ঘোড়াই, সুমন জানা বলেন প্রতি বছর রাজ্যে ৩৫ হাজার এবং অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় ১০ হাজার অধিক উচ্চ শিক্ষিতরা এমন বি এড, ডি এল ইডি প্রশিক্ষন নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চপ ভাজতে আর দেশের প্রধানমন্ত্রীর বলছেন পাকোড়া ভাজার বাণী শুনছে।,
ওঁরা জানান, দুই বছর ধরে এই কোর্স করতে করতে তিন, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ। তার জন্য জমি জায়গা, ঘটি বাটি, বিক্রি করতে হয়েছে পরিবারকে। রাজ্যের গত তিন বছর কোনো নিয়োগ নেই। আর ২০১৪ সালের পর এস এস সি তে নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তিও নেই। মাস্টার ডিগ্রির পর দু বছর সময় নেয় বিএড, ডি এড। তখন ২৬ বছরের যুবক যুবতী আজ ৩৩ বছর বয়স। এমন প্রথম শ্রেনীর সহ স্বর্ন পদক পাপক বিজ্ঞান, কলা বিভাগের সৌমি চৌধুরী, সৌরভ মুদলি, সুইটি রায়, সুনীতা প্রতিহার, বিশ্বজিৎ দাসরা কেই ঝাড়গ্রাম, কেউ ঘাটাল, কাঁথি, হলদিয়া এমন স্থান থেকে এসেছেন এমন কর্মসূচীতে। অবিভক্ত মেদিনীপুর, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা এমন হাজার হাজার শিক্ষিতরা সংগঠিত হচ্ছেন তাদের দাবীকে সামনে রেখে।
শিক্ষক পদপ্রার্থী সংগঠন দুটির নেতা শংকর সামন্ত, শুভঙ্কর দত্ত বলেন , এর আগে যে সরকার ছিল তারা নিয়মিত নিয়ম মাফিক প্রতি বছর এসএসসি, টেট পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করতেন। আর বর্তমান সরকার ১০ বছরে একবার মাত্র নিয়োগ করতে পেরেছেন, তাও হাজার অভিযোগ, ঘুষ দিয়ে চাকরি দেওয়ার। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ আজ এত বছর হয়ে গেল একবারও করতে পারলেন না। নিয়ম ভাঙার জন্য হাইকোর্টে কেসের উপর কেস! কেসের নামে জর্জরিত এই সরকার । তাই এর প্রতিবাদ জানানোর জন্য সমস্ত শিক্ষিত যুবক যুবতীরা রাজপথে নেমেছেন।”
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন,’ জেলা শাসক, জেলার শিক্ষা পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া সহ, প্রথাগত পদ্ধতি মেনেই আমরা আমাদের দাবি নিয়ে যাচ্ছি সর্ব্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত। কিন্তু এই সরকার বধির। সেই বধিরতা ও ঘুম ভাঙাতেই আজ রাস্তায় নেমেছি। প্রসাশন যতক্ষণ না আলোচনায় নবসে ততক্ষণ অবরোধ চলবে। এরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নেওয়া হয় আগামী বুধবার আলোচনার। তবে, ঘোষনা করা হয়েছে আগামী ২৪ শে নভেম্বর কলকাতাতে সারা রাজ্যের শিক্ষিত বেকাররা মহামিছিল করে নবান্ন অভিযান করবে।