নিজস্ব সংবাদদাতা: জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে তীব্র জনরোষ। শনিবার খোদ কলকাতা থেকে শুরু করে দক্ষিন এবং উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি সর্বত্রই বিক্ষোভে নাজেহাল প্রশাসন। এদিন সোনারপুরে বিডিও অফিস ভাঙচুর হয়েছে, রাজারহাটে পথ অবরোধ করায় জনতার ওপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। হুগলিতেও তীব্র বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে আর সব চেয়ে বড় কথা বিক্ষোভের জেরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে যাওয়ার পথে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে আটকে ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছে কলকাতায়। এসবই কাকদ্বীপের প্রশাসনিক বৈঠকে বসেই খবর পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। আর সেই বৈঠকে বসেই দলীয় নেতাদের মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “ত্রান নিয়ে কোনও দুর্নীতি বরদাস্ত করবনা। আমার কাছে আ্যপ আছে আমি সব দেখতে পাব।”
নেতাদের কাটমানি আর লকডাউনের ত্রানের চালচুরি নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার আমফানের ত্রানের টাকাতেও যাতে দলের নেতারা ভাগ না বসাতে পারে তাই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন আমফানের টাকা পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রামপঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদে ঢুকবেনা। টাকা যাবে সরাসরি উপভোক্তা বা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে। তিনি উপস্থিত সরকারি আধিকারিকদের বলেন, “ঘর বানানোর টাকা, বিভিন্ন স্কিমের টাকায় যেন কেউ ভাগ না বসাতে পারে দেখুন। তেমন হলে আমি ছাড়বনা।”
দুর্গত মানুষের কাছে রেশন সহ ত্রাণ পৌঁছনো নিয়ে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে, জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ শুক্রবারই রাজ্যে এসে ১০০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, রাজ্যের তরফেও আরও ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তবে অর্থের যাতে অপচয় না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক, বই, জুতো নষ্ট হয়ে গেলে তাদের সাহায্য করার জন্য জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর জন্য আলাদা প্যাকেজের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি, স্কুল বাড়ি ভাঙলেও দ্রুত সারিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
উল্লেখ্য দলের নেতাদের কাটমানি খাওয়া নিয়ে সতর্ক করার পরই রাজ্য জুড়ে কাটমানি বিরোধী আন্দোলনে জেরবার হতে হয় তৃণমূলকে। সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি থেকে নির্মল বাংলা মিশন থেকে শুরু করে সর্বত্রই কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। নেতাদের ঘরবাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বহু নেতা ঘর ছেড়ে পালান। কয়েকজন আত্মহত্যা অবধি করে।অনেকে গাড়ি বাড়ি বেচে জনতার হাত থেকে রেহাই পায়। এরপর করোনা আর লকডাউন পর্বে একের পর এক চাল চুরির অভিযোগে জেরবার হয় দল। মুখ্যমন্ত্রীকে এবারেও সাবধান করতে হয়। সেই সব অভিজ্ঞতা থেকেই আমফানের ত্রান নিয়ে আগাম সতর্কতা। যদিও একটি বেসরকারি সংবাদমাধমে আলোচনায় বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ” মুখ্যমন্ত্ৰী প্রতিবার বলেন সিন্ডিকেট রাজ মানবনা কিন্তু সিন্ডিকেট রাজ চালিয়েই যাচ্ছে তৃণমূলের নেতারা। এবারেও তাই হবে। তৃণমূলের লোকেরা লুট ছাড়া থাকতে পারেনা।”