নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউন ভেঙে দিয়েছিল কোমর আর টানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর শেষে আমফান কেড়ে নিয়ে গেল প্রানটাই।শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানার অন্তর্গত ৫০ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনা কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছে গ্রামবাসীদের কারন যে পরিস্থিতির শিকার হয়ে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন সেই অবস্থার ভুক্তভোগী কম বেশি সবাই। পুলিশ জানিয়েছেন, আত্মঘাতী ব্যক্তির নাম প্রহ্লাদ দুয়ারী বাড়ি গাঙ্গুটিয়া গ্রামে।
শুক্রবার বিকেলে নিজের ঘরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই ব্যক্তি। দুপুরে খাওয়ার পর নিজের ঘরে বিশ্রাম নিতে গেছিলেন ওই ব্যক্তি। ঘটনার সময় তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়িতে ছিলেন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও ঘর থেকে বেরুননি দেখে সন্দেহ হয় পুত্রবধূর। সামনেই বাজারের দিকে গিয়েছিল ছেলে খবর পেয়ে ছুটে আসেন তারপরই দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ।
মৃতের ভাইপো দীপঙ্কর জানিয়েছেন, ‘চাষবাসের পাশাপাশি বাড়ি নির্মানের কাজের ঠিকাদারি করতেন কাকা। গত আড়াই মাস সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর সেকারনে বাজারে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যায় ক্ষেতের ফসল এই দুই ধাক্কাই কাকার মনোবল ভেঙে দিয়েছিল। এরই পরিণতিতে এই আত্মহত্যা।’
পরিবার সুত্রে আরও জানা গেছে প্রহ্লাদের স্ত্রী বছর খানেক আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। মাথায় চোট লেগেছিল তাঁর। ওড়িশায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হয়। চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকা খরচ হয়েছিল এবং এখনও তাঁর ওষুধের জন্য নিয়মিত ভাল টাকা খরচ হয়। এরই পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বাড়ি বানানোর কাজ ধরেছিলেন প্রহ্লাদ যার মধ্যে একটি প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ছিল। এই কাজের জন্য মিল থেকে ধার করে তক্তা, বল্লি ইত্যাদি এনেছিলেন প্রহ্লাদ। সেই সব কাজ করে ঢালাই করার আগেই লকডাউন হয়ে যায় ফলে খরিদ্দারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেননি অথচ বাজারে দেনায় পড়ে যান।
শোকার্ত গ্রামবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন, এ বছর দোলের পর থেকেই টানা বৃষ্টি হয়ে গেছে, মাঝখানে লকডাউন এবং লকডাউনের মধ্যেই নিয়ম শিথিল করে ধান কাটার কাজ শুরুর মধ্যেই ফের বৃষ্টি। ফলে ৭০% বোরো ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল গাঙ্গুটিয়া ও আশেপাশের গ্রামগুলির। বাকি ৩০% ধানের ২০% ধান বাড়িতে তুলতে পেরেছিল চাষিরা। ১০% ধান কাটা হয়ে মাঠেই পড়েছিল যা আমফান শেষ করে দিয়ে গেছে।
গাঙ্গুটিয়ার এক বাসিন্দা উত্তম দাস জানিয়েছেন, ” বোরো চাষ পুরোটাই চাষিরা ধারের ওপর করে থাকে। সার বিষ ক্ষেতের সেচের জন্য জল সবই ধান উঠলে তবে চাষিরা শোধ করেন। এ চাষে লাভ যেমন সাধারন চাষের চেয়ে বেশী ঠিক তেমনই খরচও সেই তুলনায় তিনগুন বেশী। এ চাষে লোকসান হলে চাষিকে যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয় তা ধারনার বাইরে। আমরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।” গ্রামবাসী ও পরিবার উভয়েই তাই মনে করছেন দুই বিপর্যয়ের ধাক্কাই আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে প্রহ্লাদকে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।