নিজস্ব সংবাদদাতা: যেন দিলীপ ঘোষকে আটকাতে পারলেই করোনা কিংবা আমফানকে আটকে দেওয়া যাবে তাই দিনভর সিঙ্গেল পয়েন্ট কর্মসূচী নিয়ে হাঁটল পুলিশ আর তৃণমূল। পদে পদে বাধা দিয়ে শেষ অবধি দিলীপ ঘোষকে কলকাতায় ফেরৎ পাঠিয়ে জয়ের হাসি হাসল দুই জেলার পুলিশ আর তৃণমূল। গোটা ঘটনায় কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, “এঁরা বোধহয় ভয় পেয়ে গেছে যে দিলীপ ঘোষ গ্রামে গেলে গ্রামের পর গ্রাম বিজেপি হয়ে যাবে।” শনিবারের পর রবিবারও আমফান দুর্গত এলাকায় প্রবেশ করতে বাধা পেয়ে দিলীপ ঘোষ জানান, “লকডাউনের সরকারি নিয়ম মেনেই আড়াই মাস ঘরবন্দী ছিলাম। আজ যখন ঘূর্ণিঝড় কবলিত আমারই সংসদ এলাকায় আমি যেতে চাইছি তখন আমার পথ আটকানো হচ্ছে। মনে হচ্ছে পুলিশ আর তৃণমূল ভয় পাচ্ছে যে আমি এলাকায় গেলে এঁদের কারবার ফাঁস হয়ে যাবে।”
এদিন প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঢোকার চেষ্টা করেন দিলীপ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা বিধানসভা তাঁর সাংসদ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় সড়কে যাওয়ার সময় আবরোধ চলছে বলে প্রথমে তাঁর গাড়ি জাতীয় সড়ক থেকে রাজ্য সড়কে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। এর পর নন্দকুমারের কাছে শ্রীকৃষ্ণপুরে তাঁর গাড়ি আটকায় পুলিশ। দিলীপবাবুর গাড়ি আটকাতে আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী। ছিল দাঙ্গা দমন বাহিনী ও রোবোকপ। বোঝাই যাচ্ছিল পরিকল্পনা মাফিকই দিলীপকে এনে ফেলা হয় রাজ্য সড়কে।
পুলিশের প্রথমে দাবি ছিল, সামনেই জাতীয় সড়কের ওপর জল ও বিদ্যুতের দাবিতে অবরোধ চলছে। তাই সাংসদ সেখানে গেলে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি হতে পারে। রাজ্য সভাপতির গাড়ি আটকানো হয়েছে এই খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন বিজেপি কর্মীরা। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। কেউ বিক্ষোভ দেখাতে মাটিতে বসে পড়েন। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পালটা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা। যদিও তাদের দাবি, তারা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে সেখানে এসেছেন তাঁরা।
বেশ কিছুক্ষণ এই রকম পরিস্থিতি চলার পর গাড়ি ঘোরান দিলীপবাবু। তিনি বলেন, যে পুলিশকে আমাকে আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা উদ্ধারকাজে নামালে মানুষের উপকার হত। তাঁর দাবি, দলীয় কর্মীদের দিয়ে পথ অবরোধ করিয়ে পুলিশ দিয়ে আমাকে আটকাচ্ছে তৃণমূল। এদিন দিলীপ বাধার সম্মুখীন হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের খঞ্চিতেও।
এরপরই গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর যাওয়ার পরিকল্পনা নেন কিন্তু এবারও ডেবরা থানার শ্রীরামপুরে জাতীয় সড়কের ওপর পথ আটকানো হয়। পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বচসার পর কলকাতার অভিমুখে গাড়ি ঘোরান তিনি।
শনিবারও একই ঘটনা ঘটেছিল কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢালাই ব্রিজে। সেখানে দিলীপবাবুর পথ আটকায় পুলিশ। বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ ও পালটা বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মারামারিতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে বলে অভিযোগ। সবক্ষেত্রেই পুলিশ লকডাউনের নিয়ম দেখিয়েই দিলীপ ঘোষের পথ আটকেছে কিন্তু যখন তৃণমূলের রাঘব বোয়াল থেকে চুনোপুঁটি নেতারা অবধি দলবল নিয়ে গ্রাম শহর চষে বেড়ান তখন পুলিশের নিয়ম কোথায় যায় বলে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সভাপতি। পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল সভাপতি তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর বক্তব্য, “ত্রানের নামে চুটকিবাজী করতে আসছেন উনি জেলার মানুষ ওনাকে ভাল করেই চেনে তাই প্রতিবাদ করেছে।”