নিউজ ডেস্ক: “খেলা শেষ হবে, বিকাশ আরম্ভ হবে।“ পুরুলিয়ার ভাঙড়ায় সভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ মোদির। ব্রিগেড সমাবেশের ১০ দিন পরেই ফের রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার ভাঙড়া নবকুঞ্জ ময়দানের জনসভা করেন তিনি। অন্ডাল কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ বিমানবন্দরে নেমে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে করে রওনা দেন পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে। এরপর পুরুলিয়ার নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন তিনি৷ এদিনের জনসভা থেকে একের পর ইস্যু ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন মোদী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুরুলিয়া ও জঙ্গলমহলের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। মোদির দাবী, পুরুলিয়ায় পর্যটনের উন্নতিতে কোনও কাজ হয়নি। যে রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় সেখানে জল সঙ্কট কমেছে। তিনি জানান, বাংলার প্রতিটি প্রান্তকে রেলের সঙ্গে যুক্ত করাই লক্ষ্য। তিনি জানিয়েছেন, পূর্ব ভারতের জন্য ৫০,০০০ কোটি প্রকল্পে মঞ্জুরি। ফ্রেট করিডোর সেকশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। ডানকুনি পর্যন্ত ফ্রেট করিডোরের কাজ শুরু হয়ে যাবে। পুরুলিয়াকেও করিডোরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলার হাইওয়ের উন্নতির জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আর মানুষকে বাংলা ছেড়ে পালাতে হবে না। কর্মসংস্থান হবে, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া যুবকদের চাকরি। ছৌ শিল্পী, হস্তশিল্পীদের সুবিধা প্রদান করা হবে বলেও আশ্বাস দেন মোদি।
জঙ্গলমহলের অবস্থা প্রসঙ্গেও সরব হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দিল্লিতে থেকেও জঙ্গলমহলের সমস্যার কথা শুনতে পাই। তোষণের রাজনীতির জন্য যুবকদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতি মমতা থাকলে এমন হত না। এখানে দিদির নির্মম সরকার মাওবাদীদের প্রাধান্য দেওয়া দিচ্ছে। গরিবের টাকা লুঠ করে তৃণমূল সরকার। বাংলায় সিন্ডিকেট রাজ বন্ধ হবে, কাটমানি বন্ধ হবে। বাংলায় তোলাবাজিদের পরাজয় হবে।“
এরপর রাজ্যের সরকারকে তোপ দেগে মোদি বলেন, তৃণমূল সরকার নিজের খেলাতেই মত্ত। পুরুলিয়ায় জলসঙ্কট ভরা জীবন দিয়েছে তৃণমূল সরকার। শুধু ভেদাভেদের রাজনীতি তৃণমূলের। ৮ বছর পরেও পুরুলিয়ায় জল প্রকল্প হয়নি। এর জবাব কে দেবে দিদি ? পুরুলিয়ার মানুষ জবাব চায়। “খেলা শেষ হবে, বিকাশ আরম্ভ হবে।“ দাবী মোদির। তিনি বলেন, কাজের হিসেব দিন দিদি। বছরের পর বছর ধরে একটি সেতুও তৈরি করতে পারেনি তৃণমূল। এখন বলছে উন্নয়নের কথা। বাংলা বিজেপি ক্ষমতায় এসে আগে এই সমস্যার সমাধান করবে। বাংলায় ডবল ইঞ্জিন সরকার। দিল্লির ইঞ্জিন ও বাংলার ইঞ্জিন সরকার এলে পুরুলিয়ায় বিকাশ হবে বলেও দাবী করেন মোদি। পাশাপাশি এদিন বহিরাগত-তত্ত্ব নিয়ে মমতাকে নিশানা করেন মোদি। বলেন, ‘দিদি আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছেন। বিজেপি নেতাদের ওপর রাগ দেখাচ্ছেন দিদি। দিদিও ভারতের মেয়ে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আছে। দিদির চোট লেগেছে, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন দিদি।’ প্রধানমন্ত্রীর দাবী, চুরির খেলা আর চলবে না। তিনি এদিন জোর দিয়ে বলেন, ‘লোকসভায় তৃণমূল হাফ, বিধানসভায় পুরো সাফ।’
বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মসনদ দখলের লড়াইতে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে চাইছে না গেরুয়া শিবির। কিন্তু গত রবিবার বিজেপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিক্ষোভের খবর আসতে থাকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং সেইসঙ্গেই বিজেপির জনসভায় ভিড়ও কমতে থাকে হঠাৎ করেই। এবারে সেই ভিড় টানার উদ্দেশ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সভাকে সামনে রেখেই বাংলার মানুষদের আকর্ষণ করতে চাইছে গেরুয়া শিবির বলেই মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল।