নিউজ ডেস্ক: কমিশনের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে জেগে উঠল “ঘুমন্ত কমিশন”; প্রচারের সময় কোভিড বিধি ভঙ্গ করলে মহামারী ও বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গেই কমিশন এই মর্মে নির্দেশ জারি করে যে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৭টা থেকে সমস্ত রোড শো, পদযাত্রা নিষিদ্ধ। বাইক, সাইকেল র্যালিতেও কমিশনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এদিন থেকেই। নির্দেশে বলা হয় সামাজিক দূরত্ব মেনে সভা করা যাবে সর্বোচ্চ ৫০০জনকে নিয়ে। আগে দেওয়া সমস্ত র্যালির অনুমতিও বাতিল বলে এদিন জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। আর কমিশনের এমন নির্দেশের পরেই আগামী সমস্ত সভা বাতিলের ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে রাজ্যে আবারও নতুন রেকর্ড করোনার; শেষ ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু ৫৬ জনের। রাজ্যে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৪৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। শুধু মহানগরীতেই একদিনে সংক্রমিত ২ হাজার ৬৪৬। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনায় একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৭২ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও বেলাগাম করোনা। রাজ্যে কমে গিয়েছে সুস্থতার হারও। করোনার সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মাঝেই আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বঙ্গে বাকি আরও ২ দফা নির্বাচন। এরই মধ্যে একাধিক প্রার্থী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গিয়েছেন ২ জন প্রার্থী। শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে বাকি দুই দফা নির্বাচন একবারে করানোর আবেদন জানানো হলেও সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।
আর এদিকে, করোনা আবহে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে বৃহস্পতিবারই কমিশনের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট। করোনা আবহে নির্বাচনী প্রচার বন্ধের মামলায় কমিশনের ভূমিকায় চুড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, “সার্কুলার নয় আমরা কমিশনের কাছে পদক্ষেপ চাইছি। আমরা অর্ডার দিতে পারছি না কারণ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি কোর্টে নেই। প্রয়োজনে আমরা টি এন শেসনের কাজ করব।”
কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির আরও বক্তব্য, কমিশনের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এর কোনও ব্যবহার করছে না কমিশন। এই করোনা কালে টি এন শেসনের দশ ভাগের একভাগ করে দেখাক কমিশন। একটা সার্কুলার দিয়ে জনগণের ওপর সব ছেড়ে রেখেছে কমিশন। পুলিশ, ক্যুইক রেসপন্স টিম সব আপনাদের আছে। ‘তাও কেন সেসবের ব্যবহার করছেন না?’ আর হাইকোর্টের এই অসন্তোষ প্রকাশের পরেই জেগে উঠেছে কমিশনও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৭টা থেকে সমস্ত রোড শো, পদযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেয় কমিশন। পাশাপাশি আগে দেওয়া সমস্ত র্যালির অনুমতিও বাতিল বলে এদিন জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
আর কমিশনের এই নির্দেশের পরেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দেন, আগামী সমস্ত নির্বাচনী সভা বাতিল করার; ট্যুইটে ঘোষণা করেন, এবার শুধু ভার্চুয়ালি সভা। তবে কবে-কোথায় ভার্চুয়াল সভা, তা পরে জানিয়ে দেবেন বলেই জানান মমতা।
উল্লেখ্য, এর আগে এদিনই করোনা সংক্রান্ত জরুরি বৈঠকের কথা জানিয়ে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গ সফর বাতিল করেন। ভার্চুয়ালে বক্তৃতা দেবেন বলে জানান তিনি। ২৩ তারিখ কলকাতা, সিউড়ি, মালদা, মুর্শিদাবাদে মোদির সভা করার কথা ছিল। এদিন বিকেল ৫টায় ভোটের প্রচারে ভার্চুয়াল সভা করবেন মোদি বলে জানানো হয়েছে।