অরুন কুমার সাউ : ১৫মাস আগেই বিয়ে হয়েছিল মেয়ের। দিল্লিতে চুটিয়ে সংসার করছে মেয়ে জামাই। সংসার গুছিয়ে উঠে মেয়ে ডেকেছিল বাবা-মাকে। উদ্দেশ্য দিল্লি ও তার আশেপাশের জায়গা বাবা-মাকে ঘুরিয়ে দেখানো। আর মেয়ের সেই আবদার মেটাতে ছুটেও গেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের দম্পতি। কিন্তু আর ফেরা হলনা কারুরই। মেয়ে জামাই সমেত এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল চারজনেরই। সঙ্গে প্রান হারিয়েছেন অভিশপ্ত গাড়িটির চালকও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত দম্পতিরা হলেন শ্রীকান্ত ও কবিতা মাইতি এবং তাঁদের মেয়ে অনন্যা এবং জামাই অরিজিৎ বিশ্বাস। কলকাতার যাদবপুরের বাসিন্দা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অরিজিৎ দিল্লিতে কর্মরত ছিলেন আর সেই কারনেই বিয়ের পর অনন্যাকে নিয়ে দিল্লিতেই চলে যান অরিজিৎ। সেখানেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন তাঁরা। একটু গুছিয়ে নেওয়ার পর অনন্যা তাঁর বাবা মার কাছে আবদার করে তাঁর সংসার দেখে যাওয়ার জন্য । পাশাপাশি এক সাথে চারজন মিলে ঘুরে দেখা যাবে দিল্লির আশপাশের দ্রষ্টব্য জায়গা গুলি। মেয়ের একান্ত অনুরোধে হোলির ঠিক আগের অর্থাৎ ৭ই মার্চ দিনই দিল্লি রওনা দেন তাঁরা। দিল্লিতে পৌঁছে মেয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন ।সেখান থেকে তাজমহল, লক্ষ্মৌ-সহ দিল্লির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শণে বের হন ভাড়া করা একটি গাড়ি নিয়ে ।
বুধবার উত্তরপ্রদেশের ছোবিয় এটোয়া এলাকায় ব্যস্ততম জাতীয় সড়কে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভাড়া গাড়ির চালক একটি ট্রেলারের পেছনে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তিনজনের। অপরদিকে মেয়ে অনন্যা ও চালককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ভোররাতে মৃত্যু হয়। স্থানীয় ছোবিয়া থানার পুলিশ পরিচয় জানতে পেরে তমলুকে শ্রীকান্তবাবুর বন্ধুকে ও পরিবারের লোকজনদের ফোন করে ঘটনা জানায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ মারফৎ তমলুকের মাইতি পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের কাছে এসে পৌঁছানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। মর্মান্তিক এই ঘটনার কথা শুনে শোকস্তব্ধ প্রতিবেশিরাও। শোকের ছায়া নেমে আসে সমগ্র তমলুক শহর জুড়েও ।
জানা গেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার অমৃতবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত মাইতি। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের ড্রাফট ম্যান বিভাগের কর্মী ছিলেন। আর সেই সুবাদে তমলুকের জেলাশাসকের দপ্তরের পিছনের সরকারি আবাসনেই থাকতেন তাঁরা । আত্মীয়দের সূত্রে জানা গেছে বৃহস্পতিবারই তমলুকে ফেরার কথা ছিল মাইতি দম্পতির। তার পরিবর্তে তাঁদের মৃতদেহগুলি আনার জন্য পরিবারের লোকজন ছোবিয়া থানার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।