নিজস্ব সংবাদদাতা: বিজেপিতে যোগদানের পর প্রথম কালো পতাকা দেখলেন প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং দেখলেন সেই জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলায় যেখানে তাঁর অনুগামীরা তাঁকে জনগণের ‘কুটুম’ বলেই দাবি করে থাকেন। সোমবার ঝাড়গ্রামে বিজেপি নেতা কর্মীদের সঙ্গে পরিচিতি হওয়ার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই উপলক্ষ্যে তিনি ঝাড়গ্রাম রওনা হয়েছিলেন। পথে লোধাশুলির কাছে ‘দাদার অনুগামী’দের পক্ষ থেকে একটি বিশাল বাইক বাহিনী তাঁকে স্বাগত জানানোর তৈরি হয়েছিল। সেই বাহিনী যখন তাঁকে নিয়ে রওনা হয়েছিল তখনই কালো পতাকার সম্মুখীন হতে হয় ঝাড়গ্রাম শহরে প্রায় প্রবেশের মুখেই।
লোধাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম ১৫কিলোমিটার রাস্তা তাঁর অনুগামীদের কয়েক’শ বাইক তাঁকে এসকর্ট করে নিয়ে যাবে এটাই পরিকল্পনা ছিল। সেইমত বাইক বাহিনীর পেছনে চলে শুভেন্দু অধিকারীর এসইউভি। পুরানো ঝাড়গ্রামের মোড়ে কয়েকজন তৃনমূল কর্মী কালো পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন। তাঁরাই কালো পতাকা উঁচিয়ে মীরজাফর, বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন। এই তৃনমূল কর্মীদের নেতৃত্ব দেন ঝাড়গ্রাম জেলা তৃনমূল ছাত্রপরিষদের সভাপতি আর্য ঘোষ। এঁরা গো ব্যাক ধ্বনিও দিতে থাকেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা ওই কর্মীদের রাস্তার পাশেই আটকে রাখেন কারন পুলিশের কাছে খবর ছিল শুভেন্দু অধিকারীর পথ অবরোধ করতে পারেন ওই কর্মীরা।
উল্লেখ্য তৃনমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের পর এই প্রথম শুভেন্দু অধিকারীকে কালো পতাকা এবং গো-ব্যাক ধ্বনির মুখে পড়তে হল। দু’দিন আগে কলকাতায় হেস্ট্রিংস এলাকায় বিজেপির দপ্তরে দলবদলকারি তৃনমূল বিধায়ক সাংসদদের অভ্যর্থনা সভায় গিয়ে তৃনমূল কর্মীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মন্ডলকে। তাঁর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে তখন। কিন্তু তখনও শুভেন্দু অধিকারীকে বাধা দিতে দেখা যায়নি বা তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায়নি। সেই শুভেন্দু অধিকারীকে ঝাড়গ্রামের মত জায়গায় বিজেপির চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল তৃনমূল কর্মীদের বিক্ষোভ দেখাতে সমর্থ হওয়াটা খানিকটা বিস্ময়ের বটে।
ঝাড়গ্রাম জেলায় বিজেপি কতটা শক্তিশালী তা শুভেন্দুর এদিনের কথাতেও পরিষ্কার হয়েছে। শুভেন্দু নিজে যখন দলে ছিলেন তখন পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। শুভেন্দু বলেছেন, ঝাড়গ্রামের চারটি বিধানসভাতেই বিজেপি শুধু এগিয়ে নয় আদতে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ দখল করেছিল বিজেপিই কিন্তু রাতের অন্ধকারে এই জেলা পরিষদ তৃনমূলের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। ঝাড়গ্রাম জেলায় শুধু বিজেপি একাই শক্তিশালী এমনটা নয় পাশাপাশি এই জেলাতে শুভেন্দুর নিজস্ব একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী রয়েছে। অন্যদিকে তৃনমূল এই জেলাতে অনেকটাই নিজস্ব কোন্দলে দূর্বল, নড়বড়ে সংগঠন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখানোর মধ্যে শুধুই তৃনমূলের শক্তি নাকি অন্য শক্তির ইন্ধন রয়েছে পেছনে তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে যথেষ্ট।
শুভেন্দু নিজে অবশ্য কালো পতাকা দেখানো প্রসঙ্গে বলেছেন, “আমাকে কালো পতাকা দেখাতে হাজির ছিলেন ৫জন যার মধ্যে তিনজনকে আমি চিনি। ওঁদের আমি নমস্কার জানিয়েছিলাম। ওঁরা মাথা নিচু করে ফেলেছেন।” বিজেপির ঝাড়গ্রাম সংগঠনকে যথেষ্ট শক্তিশালী বলে দাবি করে শুভেন্দু বলেছেন, ‘আমি ঝাড়গ্রামে দলকে জেতাতে আসিনি, এসেছি মার্জিন বাড়াতে। জেতানোর জন্য সুখময় সৎপথীরাই যথেষ্ট।’
ঝাড়গ্রাম জেলা তথা রাজ্যে নতুন করে তৃনমূলের নেতৃত্বে আসা ছত্রধর মাহাত সম্পর্কে তাঁর উক্তি, “ওনার সম্পর্কে আমি কিছু বলবনা। যারা ঝাড়গ্রাম শহরকে ৩৭দিন অবরুদ্ধ রেখেছিল সেই নৈরাজ্যকারীদের সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে চাইনা বলবে সেইসব মানুষেরা যাঁদের পরিবার সদস্যরা খুন হয়েছেন কিংবা গুম হয়ে রয়েছেন।’ যদিও মাওবাদী পর্বে এই ছত্রধর মাহাতকে গন আন্দোলনের নেতা বলেই অভিহিত করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।