নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার সন্ধ্যায় সবং এসেছিলেন সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের সীমান্ত ঘেঁষা পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার দশগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা থেকে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সবংয়েরই দেভোগ এলাকায়। সদ্য প্রয়াতা হয়েছেন সবং ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি প্রভাত মাইতির স্ত্রী। সেই উপলক্ষ্যে প্রভাত মাইতি এবং তাঁর সন্তান পার্থ প্রতিমকে শোক স্বান্তনা দিতেই এসেছিলেন তিনি। দশগ্রাম থানার দেহাটি ব্রিজ থেকে প্রভাত মাইতির তেমাথানির বাড়ি প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
এই পুরো রাস্তাই শুভেন্দু অধিকারীকে প্রায় এসকর্ট করে আনে ‘দাদার অনুগামী’র দল। প্রায় আধঘন্টা তেমাথানিতে থাকার পর একই পথে ফিরে যান নন্দীগ্রামের বিধায়ক। এরপরই রাত দেড়টা নাগাদ দশগ্রাম এলাকার দুটি গ্রামে প্রায় ডজন খানেক ‘দাদার অনুগামী’র বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ কোলন্দা এবং কোপ্তিপুর এলাকায় রাতভর ব্যাপক বোমাবাজির পাশাপাশি, কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও মারধরের পাশাপাশি এক জন ‘দাদার অনুগামী’কে তুলেও নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ এই সমস্ত ঘটনাই ঘটেছে সবং তৃণমূলের বর্তমান ক্ষমতাসীন ব্লক তৃণমূলের মদতে।
কোলন্দা গ্রামের বাসিন্দা এক ‘দাদার অনুগামী’ যুগল মালাকার জানিয়েছেন, ‘প্রভাত মাইতির প্রয়াতা স্ত্রী তথা আমাদের প্রিয় দিদিমনির শিক্ষিকা বকুল মাইতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে এসেছিলেন দাদা (শুভেন্দু অধিকারী)। আমরা তাই বেশ কয়েকজন এই এলাকা থেকে গিয়েছিলাম। তারপর ঘরে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত দেড়টা নাগাদ স্থানীয় কিছু তৃনমূলের নেতার নেতৃত্বে শুরু হয় ব্যাপক বোমাবাজি। বাড়ি ভাঙচুর। সঙ্গে অশ্রাব্য গালাগালি। ওরা বারবার বলছিল, ‘দাদার অনুগামী করা জীবনের মত শেষ করে দেব। কেটে কুচিয়ে রেখে চলে যাব।’
যুগল বলেন, ‘আমরা দরজা খুলে দেখতে গিয়েছিলাম কী হয়েছে। সেই সময় আমাকে টেনে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করা হয়। বাড়ির মেয়েরা না আটকালে হয়ত মেরেই ফেলত আমাদের। প্রায় ২০/২৫জন ছিল সংখ্যায়। হাতে লাঠি, তরোয়াল ছাড়াও বন্দুক ছিল ওদের।”
আক্রান্ত যুগল মালাকার তৃণমূলের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি। তিনি জানান, ‘আমাদের এক সহকর্মী অর্জুন মানা কে ওরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বতুয়া বাজারের তৃনমূলের পার্টি অফিসে আটকে রাখা হয়। মারধর করা হয়। এরই মধ্যে পুলিশ এসে পড়ায় অর্জুনকে ছেড়ে দেয়। এই ভাবে অশোক ভক্তা, অনিল আদক, জয়দেব মাইতি, বাবলু মাইতিদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।”
আক্রান্তদের অভিযোগ, “দুটি গ্রামে রাত দেড়টা থেকে তিনটা অবধি এই হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং একই সঙ্গে চলেছে বোমা বাজি। পুলিশ এসে তাজা বোমা অবধি উদ্ধার করেছে। মদ্যপ ওই আক্রমণকারীরা বারবার বলছিল, এবার আ্যকশন শুরু হল, কোন দাদা তোদের বাঁচায় দেখে নেব।”
সবং তৃনমূলের ব্লক সভাপতি অমল পন্ডা বলেন,
“আমি যতদূর জেনেছি দুই মেদিনীপুরের সীমান্ত ওই দেহাটি এলাকায় কিছু চটি বা ধাবা রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী চলে যাওয়ার পরও তাঁর কিছু অনুগামী যাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরের দিক থেকে এসেছিলেন তারা ওই চটি গুলোতে বসেছিলেন। সেখানে এপাশেরও কিছু মানুষ বসেছিলেন। সেখানেই তর্ক বিতর্ক শুরু হয় যার পরিণতি হিসাবে কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। যা না ঘটলেই ভাল হত।”