নিজস্ব সংবাদদাতা: অপারেশন কী তাহলে শুরু করে দিলেন শুভেন্দু, ?২রা ফেব্রুয়ারি থেকেই কী শুরুটা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাস্টার স্টোক দিয়েই? প্রাথমিকভাবে তেমনটাই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে দীপক হালদারকে দিয়েই ধ্বসের শুরু! অভিষেক গড়ে জোর ধাক্কা দিয়ে দল ছাড়লেন তৃণমূল বিধায়ক। বেশ কিছুদিন ‘বেসুরো’ ছিলেনই বিধায়ক। বিগত কয়েকদিন ধরেই দলীয় কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি দীপক বাবুকে। যোগ দিচ্ছিলেন না কোনও সভাতেই। এমনকি ডায়মন্ডহারবার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কুলতলির সভায় অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুপস্থিত ছিলেন অভিষেকের ডায়মন্ডহারবারের সভাতেও। আর তা থেকেই জল্পনা দৃঢ় হয় দীপকের দলত্যাগের। আর শুভেন্দুর হুঁশিয়ারির পরদিনই সেই জল্পনা সত্যি করে দল ছাড়লেন তিনি। ইতিমধ্যেই দল ছাড়ার চিঠি স্পিড পোস্টে তৃণমূল ভবনে ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীর বাড়ীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বিধায়ক।
দীপক হালদার এদিন বলেন, ‘বহু বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। আমি চিঠি দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের কথা দলকে জানিয়েছি।’ বিজেপি–তে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি দল ছাড়ার পর ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। তাঁদের পরামর্শ নিয়ে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই অন্য দলে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’ অতএব দল ছাড়লেও পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ সম্বন্ধে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু ঘোষণা করলেন না দীপক হালদার।
তবে শাসকদলের অন্দরে বিধায়ক দীপক হালদার, শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। আবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। এর মধ্যে রবিবারই হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে বিজেপির মেগা যোগদান মেলা থেকে শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দেন, “২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কলকাতা আর দক্ষিণ ২৪ পরগণা আরও ফাঁকা করব। তৃণমূল কোম্পানি গড়ার জন্য আর লোক থাকবে না।” আর তার পরদিনই দলত্যাগ করলেন বিধায়ক দীপক হালদার। এছাড়াও দলের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই দূরত্ব বাড়ছিল বিধায়কের। আর গত মাসেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুলতলির সভায় যোগদান না দেওয়া দলের সঙ্গে তাঁর ফাটলটা স্পষ্ট করে দেয় আরও। অবশ্য তিনি প্রকাশ্যে সেই সময় জানিয়েছিলেন, ‘সঠিকভাবে অভিষেকের সভায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণই জানানো হয়নি আমাকে।’
তবে, এই ঘটনার আগেই অবশ্য শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ীতে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন দীপক হালদার। সেদিনের সেই বৈঠকে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা কর্মাধ্যক্ষও। সেদিন দীপক বাবু জানিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরেই পুরনো নেতা-সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও তাতে গুঞ্জন থামেনি কোনও ভাবেই। আর আজ দল ছেড়ে দেওয়ার পরেও দীপক বাবুর পদ্ম শিবিরে যোগদানের সম্ভাবনা আরও বাড়ল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, দীপক কী এখন আর আদৌ পদ্ম শিবিরে যোগ দিতে পারবেন! কেননা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন নতুন করে বিজেপিতে ভোটের আগে আর কাউকে নেওয়া হবে না। যদি তা ঠিক হয় তাহলে দীপক কী করবেন, কোথায়ই বা যাবেন? নাকি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন! তার জবাব সময় দেবে।
প্রসঙ্গত, বাম জমানায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করতে দীপক হালদারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে এক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু পরে সে বিবাদ মিটে গেলে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারের টিকিট পান দীপক। আর এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৩০ বছরের সম্পর্কে ইতি টানলেন দীপক হালদার।