নিজস্ব সংবাদদাতা: ২১শে জুলাই দলের ঘোষিত শহিদ দিবসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি জনসভায় দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের৷ সেই আহ্বান জানিয়ে সভা শেষ করার মাত্র দেড় ঘন্টা পরেই নিজেদেরই ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে গেল উত্তর চব্বিশ পরগণার হাড়োয়ায়৷ গুলি, বন্দুক আর বোমার শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ও অন্যান্যভাবে আহত হয়েছেন অন্ততঃ ১২ জন৷ মৃত্যু হয়েছে এক যুবক ও এক বৃদ্ধার। জানা গেছে মৃতরা হলেন সন্ন্যাসী সর্দার (৩৮) এবং লক্ষ্মীরানি মণ্ডল (৬২)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে শহিদ দিবস পালনকে কেন্দ্র করে তৃনমূলের আদি বনাম নব্য এই দুই গোষ্ঠীর লাগামছাড়া বেপরোয়া সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২জনের মৃত্যু ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এঁদের মধ্যে ৫জনকে কলকাতার আর.জি কর হাসপাতালে আনা হয়েছে। এরা হলেন প্রসেনজিৎ প্রামানিক, নেপাল সর্দার, প্রভাত সর্দার,গীতা সর্দার, ললিতা সর্দার। ঘটনার পর এলাকা জুড়ে ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে। এখনও অবধি গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮জন। ঘটনার ভয়াভয়তা ছাড়িয়ে গেছে এ যাবৎকালের যাবতীয় গোষ্ঠী সংঘর্ষে। বিরোধীদের দাবি সত্যি প্রমাণিত করে ধরা পড়েছে শাসকদলের হাতে বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা মজুতের ছবি।
অভিযোগ, এ দিন ২১ জুলাইয়ের উদযাপনের জন্য হাড়োয়ার মোহনপুরের পঞ্চায়েত অফিসের পাশে শতাধিক তৃণমূল কর্মী জড়ো হয়েছিলেন৷ কিন্তু একুশে জুলাই উদযাপন নিয়ে সকাল থেকেই মোহনপুর এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠী আলাদা আলাদা আয়োজন করতে থাকে৷ যা নিয়ে শুরু হয় বচসা৷ বিকেল তিনটে নাগাদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে এক গোষ্ঠীর লোকজন বাড়ি ফেরার সময় ট্যাংরামারি এলাকায় তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর লোকজন তাঁদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ৷ তপন রায় নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, ভাস্কর দাস নামে তৃণমূলেরই এক স্থানীয় বুথ সভাপতির বাড়ির ভিতর থেকে দলের অন্য গোষ্ঠীর কর্মীদের উপরে হামলা চালানো হয়৷ এই ভাস্কর দাস মোহনপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি যোগেশ্বর প্রামাণিকের অনুগামী বলে দাবি ওই তৃণমূল নেতার৷
এই সংঘর্ষেই গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মীরানি মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধার৷ ঘটনার সময় তিনি ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ আচমকাই ওই বৃদ্ধার মাথায় গুলি এসে লাগে বলে অভিযোগ৷ পরে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে মারা যান তৃণমূল কর্মী সন্ন্যাসী সর্দার৷ এর পাশাপাশি আরও দশ থেকে বারোজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তপনবাবু৷ আহতদের মধ্যেও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর৷ অভিযোগ প্রায় ১২ থেকে ১৪ রাউন্ড গুলি চলেছে৷ ঘটনার পরই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ এলাকায় পৌঁছয় হাড়োয়া থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় পুলিশ পিকেটও বসানো হয়েছে৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোহনপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি যোগেশ্বর প্রামাণিক ও মোহনপুর অঞ্চলের অঞ্চল কমিটির সদস্য তপন রায়ের অনুগামীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই গন্ডগোল লেগে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে মাছের ভেড়ি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমা-গুলি ছড়াছড়ি হয়েছে৷ এই ঘটনাও তারই জেরে ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷ মোহনপুর পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমুল নেতা তপন রায় দাবি করেন, দলের লোকের হাতেই তাঁরা আজ আক্রান্ত হয়েছেন। দলের উচ্চ স্তরে বিষয়টি তিনি জানাবেন।এলাকাটি হাড়োয়া থানা এলাকার মধ্যে হলেও মিনাখাঁ বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত। ছবি:প্রতীকি