নিজস্ব সংবাদদাতা: থামছে না হিংসা উল্টে ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে তার লালচোখ, নির্বাচনী হিংসার দুঃস্বপ্নের বাংলায় সেই হিংসার ঠিকানা এবার নারায়নগড়। বৃহস্পতিবার রাতে তৃনমূল-বিজেপি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের একাধিক। হাড় ভাঙা থেকে রক্ত ঝরা সবই হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর দিনের শেষে যেটা হচ্ছে তা’হল ভয় পাচ্ছেন মানুষ, ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন, অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফিরে আসছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে একের পর বুথ লুটের স্মৃতি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ নারায়নগড় বিধানসভা এলাকার এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে বেলদা থানার রামা নামক স্থানে। এই ঘটনায় পরস্পর পরস্পরের ওপর আক্রমনের অভিযোগ করেছে। যদিও প্রাথমিক আক্রমনের ঘটনাটি বিজেপির তরফ থেকেই ঘটেছে বলেই জানা যাচ্ছে পরে পাল্টা মার দিয়েছে তৃণমুলও। তৃনমূলের তরফে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগড় বিধানসভা কেন্দ্রের হেমচন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রচার সেরে তৃণমূল প্রার্থী সূর্যকান্ত অট্ট ফিরছিলেন নারায়নগড়ে। খাকুড়দা হয়ে ফেরার উদ্দেশ্যে তাঁরা ফিরছিলেন যার মাঝখানে পড়ে রামা গ্রাম।
ওই সময় রামা এলাকায় মিছিল করছিল বিজেপি। যে রাস্তায় প্রার্থীর গাড়ি আসছিল সেই রাস্তাতেই মিছিল হচ্ছিল। প্রার্থীর, ‘কথায় রাস্তার দুপাশে দুটি গ্রাম রামা এবং বাসুটিয়া। মিছিল আসছিল রামার গা ঘেঁষে রাস্তার দিকে। ফলে আমাদের গাড়ি বাসুটিয়ার দিকটায় দাঁড়িয়ে পড়ে। মিছিল থেকেই ওরা আমার উদ্দেশ্যে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি ও গালাগালি করছিল। আমরা গাড়ির মধ্যে পাঁচজন ছিলাম। গাড়ির কাঁচ তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরেও ওরা লোহার রড এবং টাঙ্গি নিয়ে গাড়ির ওপর হামলা চালায়।”
অট্ট জানান, ” ওই হামলায় গাড়ির কাঁচ ভাঙে, বনেট দুমড়ে দেয়। বাধ্য হয়ে আমি বেলদা থানায় ফোন করি। ওই সময় একজন পথচারী এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে বিজেপির উন্মত্ত লোকেরা। সেই পথচারী পড়ে যান। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। আমি আমার গাড়িতে ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি।” আহত ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন যে তিনি তৃনমূল সমর্থক হলেও সেদিন কোনও মিছিল মিটিংয়ে যাননি। শুধুমাত্র বিজেপির আক্রমনের প্রতিবাদ করেছিলেন।
অট্ট দাবি করেছেন এই হামলা একতরফা হয়েছে কোনও সঙ্ঘর্ষ হয়নি। যদিও ঘটনা বলছে শুরু বিজেপি করলেও মার তারাই খেয়েছে বেশি কারন ঘটনার খবর পেয়েই স্থানীয় মুরাদপুর এলাকা থেকে কয়েক ডজন বাইক নিয়ে হাজির হয়ে যায় প্রায় ৭০/৭৫ জনের তৃনমূল বাহিনী। পাল্টা মার শুরু হয়। বিজেপির মিছিলে জনা চল্লিশেক মানুষ ছিলেন যাঁরা অতর্কিত এত বড় বাহিনীর সামনে দাঁড়াতে পারেননি।
আহত এক বিজেপি কর্মী জানিয়েছেন, তৃনমূল প্রার্থীর সঙ্গে থাকা ১২ নম্বর তুতরাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃনমূল প্রধান আসাদুল্লাহ খাঁনের নির্দেশেই মুরাদপুর থেকে তাঁর দলবল আসে এবং তারাই বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালায়। ঘটনায় তাঁদের এক কর্মীর হাতে পায়ে এবং মাথায় চোট রয়েছে।পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয়রা ততক্ষণে আহতদের উদ্ধার করে বেলদা গ্রামীণ হসপিটালে ভর্তি করে। যদিও এই আক্রমনে তাঁর বা তাঁর লোকদের কোনও ভূমিকা নেই বলেই দাবি করেছেন আসাদুল্লাহ খাঁন।
রাতেই হাসপাতালে আহত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিজেপির নারায়ণগড়ের প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরি। তাঁর অভিযোগ ওই বুথ এলাকাটি বিজেপির জয়ী বুথ। তৃণমূল তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে বলে অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে এভাবে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস করে মানুষকে ভয় দেখাতে চাইছে।যাতে মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে এবারে ভোট গ্রহণে অংশগ্রহণ না করতে পারে।”
রাতে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত দুপক্ষেরই দুজনকে রাতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনে ঘটনাস্থলে রাতে পুলিশ টহল দিয়েছে। পুলিশের একটি দল রয়েছে এলাকায়।