নিজস্ব সংবাদদাতা, শালবনী: এক লপ্তে ১০হাজার যুবকের কর্ম সংস্থানের স্বপ্ন-সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে। জিন্দাল শিল্পগোষ্ঠীর গড়ার কথা ছিল ইস্পাত কারখানা সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তৎকালীন রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর জমি হস্তান্তর, কারখানার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, ২০০৮ নভেম্বর। সরকারে বামফ্রন্ট, দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলল কিন্তু ২০১১তে বাম সরকারের পতন আর সঙ্গে সঙ্গে পতন হল বেকার যুবকদের সেই সম্ভবনারও। বাংলার মসনদে আসীন নতুন সরকারের সঙ্গে এক বোঝাপড়ায় ইস্পাত কারখানা বদলে গেল পাতি সিমেন্ট কারখানায়। ১০হাজার যুবক তো দুরের কথা সিমেন্ট কারখানায় কাজ পায়নি জমি হারানো পরিবারের মানুষরাই। স্থানীয় মানুষদের চাইতে অনেক বেশি কাজ করেন কোম্পানির পেয়ারের ভিন রাজ্যের শ্রমিকরাই। ওদিকে সিঙ্গুরের কফিনে পেরেক পোঁতার পর এদিকে জিন্দাল, এখন বাংলার যুবসমাজের স্বপ্ন-সম্ভাবনার শ্মশানভূমি!
রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-যুবদের তিনটি ধারার ৩হাজার বাইক সেই শালবনীতে হাজির হল ২২৭কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। জিন্দাল কারখানা থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দুরে সমবেত হওয়া যুবকরা শপথ নিল শিল্প তাড়ানোর সরকারকেও এবার নো-এন্ট্রি বোর্ড দেখানোর।
উপস্থিত বাম ছাত্র যুব সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন, ” সিঙ্গুর থেকে শালবনী, নয়াচর থেকে শিলিগুড়ি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। ও তাঁর সরকার এই চার প্রান্তে চারটি পৃথক শিল্পতালুক গঠনের মধ্যে দিয়ে লক্ষাধিক বেকার যুবকদের দু’হাতে কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সে সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে গত দশ বছরে। তাই ফের রাজ্যে দরকার বাম সরকার কারন ভিত্তি গড়েছিল যাঁরা শিল্প গড়বে তারাই।”
রবিবার ফের জিন্দালদের গেটে সেই ইস্পাত কারখানারই একটি প্রতীকী শিলান্যাস করেন রাজ্যের যুব সংগঠনের সভাপতি মিনাক্ষী মুখার্জী। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক তাপস সিনহা এবং জেলা সংগঠনের সম্পাদক সুৃমিত অধিকারী ও সভাপতি রনজিত পাল। ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ মুদি ও সভাপতি সৈয়দ সাদ্দাম আলি প্রমুখরা।
জিন্দল গেটে প্রতীকী শিলান্যাসের পর অনতিদূরে সুন্দরার মাঠে হয় সমাবেশ। সমাবেশে জমিদাতা পরিবারের সদস্যরাও সামিল হোন। মিনাক্ষী মুখার্জী বলেন, লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবকের স্বপ্নকে সম্মান জানিয়ে কর্মসংস্থানের বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলো সেই সময়কার বামফ্রন্ট সরকার। কৃষির ভিত্তি গড়ে তুলেছিলো সেই বামফ্রন্ট। আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দায়িত্বশীল ভূমিকায় সমর্থন সহ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রান্তিক কৃষক।
উল্লেখ্য শালবনীতে জিন্দালদের প্রস্তাবিত এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানার জন্য জমি তুলে দিয়েছিলো ১২ শ পরিবার। প্রায় ৫ হাজার একর। এশিয়ার বৃহতম ইস্পাত কারখানা হওয়ার কথা। সেই কারখানায় কাজ পাওয়ার কথা জমিদাতা পরিবারের। কিন্তু ২০১৬ সালে জানুয়ারীতে বর্তমান সরকারের মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেলেন সিমেন্ট কারখানার! পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য তাপস সিনহা বলেন, ‘ কেন্দ্র বলছে পাকোড়া শিল্প আর রাজ্য সরকার বলছে চপ শিল্প। এ যেন দো ফুল, এক চিজ। মানুষের রুটি রুজির জন্য কিছুই করেনি গত ১০বছরে কিছুই করেনি বাংলার সরকার। তাই ১১ ফেব্রুয়ারী চার্চশিট দেবে এরাজ্যের ছাত্র যুবরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বিদায় সম্বর্ধনা দিয়ে।”
উল্লেখ্য এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে অধিগৃহীত জমিতে শিল্প স্থাপন এবং ঘাটাল দাসপুর এলাকায় প্রস্তাবিত শিল্প তালুক গড়ে তোলার জন্য বকুলতলা মোাড়ে, এবং গোয়ালতোাড়ে দূর্গাবাঁধে প্রতীকী শিলান্যাস করে এই তিন জায়গা থেকে তিনটি বাইক মিছিল এসে পৌঁছায় জিন্দালদের গেটে। কেন এই তিন জায়গাকে বেছে নেওয়া হল তার প্রত্যুত্তরে যুব নেতারা জানিয়েছেন, “এই সরকারের সবচেয়ে বড় ঢপ হল গোয়ালতোড়ে এশিয়ার বৃহতম চালু কৃষিখামারকে শিল্প কারখানার গড়ার নাম করে শশ্মানে পরিনত করেছে সরকার। মমতা ব্যানার্জী ওখানে শিল্প তো গড়েননি উল্টে কৃষি খামারে বীজ তৈরি বন্ধ করে কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার কৃষি বীজ বাজার তৈরী করেছে। আর বাম আমলে তৈরি হওয়া সফল শিল্প তালুক খড়গপুরের বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অধিগৃহীত জমিতে শিল্পের পরিবর্তে স্টেডিয়াম গড়ছে মমতা ব্যানার্জীর সরকার।”