নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানা এলাকার জাড়া গ্রামের অদুরেই কেঠিয়া নদীতে ২০ঘন্টা পরে মিলল তিন যুবকের মৃতদেহ। খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ল পুরো গ্রাম। তিনজনের প্রত্যেকেই কৃতি সন্তান। মাত্র কয়েকদিন পরেই এদের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল আর তার আগেই ঘটে গেল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তিনবন্ধু নতুন চাকরি পাওয়ায় বাকিদের আবদার ছিল খাওয়াতে হবে। আর সেই আবদার মেটাতেই আরও ৫বন্ধুকে তিনবন্ধু শনিবার পিকনিক করতে গিয়েছিল। নেমেছিল কেঠিয়া খালে। কিন্ত ওই জায়গায় বালি তোলার ফলে যে গভীর গর্ত হয়েছে জানা ছিলনা এঁদের। ফলে স্নান করতে নেমে জলে তলিয়ে যায় ওই তিনজন। ঘটনার খবর চাউর হতেই রাতভোর তল্লাশি চালায় চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ ও স্থানীয়রা কোনও হদিশ না মেলায় রবিবার সকাল থেকে ফের তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
জরুরি তলব পেয়ে খড়গপুর সিভিল ডিফেন্স একটি দল রবিবার সকাল থেকে বোট নামিয়ে তল্লাশি শুরু করে, আসানসোল থেকে নিয়ে আসা হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আরও একটি দলকে। এরপরই সকাল নটা নাগাদ প্রথম অর্ক রায়, শোভন কান্তি রায় নামে এই যুবকের দেহ উদ্ধার করে সিভিল ডিফেন্সের দল। আরও ঘন্টা দুয়েক পরে ডুবুরি নেমে উদ্ধার করে শুভজিৎ মঙ্গলের দেহ।
জাড়ার গ্রামের কাতারডাঙ্গার কেঠিয়া খালের পাড়ে শত শত মানুষ ভিড় করেছিলেন প্রবল উদ্বেগ নিয়ে। এতটাই ভিড় ছিল যে তা সামাল দিতে চন্দ্রকোনা থানাকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। তিনটি মৃতদেহ উদ্ধারের খবরে ভেঙ্গে পড়ে পরিবার সহ গোটা গ্রাম। গ্রামের মেধাবী তিন বন্ধুর একই সাথে মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত জাড়া সহ আশেপাশের গ্রাম গুলিও।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মৃতদের পরিবার সূত্রে জানাযায়, শোভন কান্তি রায় বর্তমানে কলকাতার মনীন্দ্রনাথ কলেজের আংশিক সময়ের অধ্যাপক হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতারই সুরেন্দ্রনাথ কলেজে স্থায়ী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেওয়ার কথা। অর্ক রায় ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে জানুয়ারী মাসের ৯ তারিখ যোগ দিতে যাচ্ছিল একটি বেসরকারী সংস্থায়, তার টিকট পর্যন্তও কাটা ছিল এবং অপর এক বন্ধু শুভজিৎ মঙ্গলের মাস কমিউনিকেশনের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল তিন মাস পরই।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন অভিন্ন হৃদয় ওই তিনবন্ধু ছোটবেলা থেকেই বাইরে থেকে পড়াশোনা করে আসছে। দেশের বাড়ি ফিরলে ওই জায়গায় আগেও পিকনিক করত। মাঝখানে কবে সেই খাল বালি তোলার কারনে খাদানে পরিনত হয়েছিল জানতেই পারেনি তাঁরা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
উল্লেখ্য ইতিহাস প্রসিদ্ধ জাড়া গ্রাম। এই গ্রামেরই ভোলা ময়রা বিখ্যাত কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সাথে কবির লড়াইয়ে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, ‘জাড়া গোলক বৃন্দাবন।’ অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি সিনেমায় এই গ্রামে একটি শ্যুটিংও করেছিলেন উত্তম কুমার। শ্যুটিং হয়েছিল রায় পরিবারের কাছারি বাড়িতে। সেই রায় পরিবারেরই সন্তান মৃত যুবক শোভন কান্তি। ইতিহাস খ্যাত এই রায় পরিবারের সঙ্গে প্রগাঢ় সখ্যতা ছিল রাজা রামমোহন রায়ের।