নিজস্ব সংবাদদাতা: এই মারকেই উপরি মার বলে কী না জানা নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের মাইতি পরিবারের কিন্তু এটা তাঁরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন এ ধাক্কা থেকে আপাতত বেরিয়ে আসা কঠিন। দাসপুর সোনামুয়ী বাজারের মাইতি জুয়েলার্সের দোকানের শাটার ভেঙে চোরের দল নিয়ে গিয়েছে সোনারুপার সহ দেড় কুইন্টালের সিন্দুকটাই। কিন্তু তার চেয়েও বড় হল, চোর নিয়ে গিয়েছে একটি যুবকের স্বপ্নকে।
জানা গেছে মঙ্গলবার সাত সকালেই সোনামুয়ী বাজারের আশেপাশের বাসিন্দারা প্রথম দেখতে পান যে মাইতি জুয়েলার্সের শাটার ভাঙা, ভেতর লন্ডভন্ড। তাঁদের মারফত খবর পেয়ে ছুটে আসেন দোকানের মালিক তপন মাইতি ও ছেলে অমলেন্দু। এসে দেখেন দেড় কুইন্টাল ওজনের লোহার সিন্দুক তুলে নিয়ে গেছে চোরের দল।
অমলেন্দু জানিয়েছেন, সোনা আর রূপার গহনা মিলিয়ে প্রায় ২লক্ষ টাকা মূল্যের সম্পদ নিয়ে গেছে চোরেরা।
তাঁর কথায় , গতবছর থেকে চলে আসা দফায় দফায় লকডাউনে আমাদের মেরুদন্ড কার্যত ভেঙে দিয়েছে। দোকানই খুলতে পারিনি ফলে কাজ করতে পারিনি সেই মত। মানুষের হাতে পয়সা কড়ি নেই, মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে আড়ম্বর নেই ফলে গহনার কাটতিও নেই। চলতি লকডাউনের দ্বিতীয় দফায় সোনার দোকান কয়েকঘন্টা খোলার অনুমতি মেলায় কিছুটা আয় হচ্ছিল কিন্তু চুরিতে যা গেল তার খেসারত দিতেই আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। কী ভাবে এই ক্ষতি সামলাবো ভেবেই উঠতে পারছিনা।
যদিও এটাই সব নয় তার চেয়েও বড় কথা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার স্বপ্নটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে দাসপুরের আর পাঁচটা যুবকের মতই অমলেন্দুও সোনার কাজ করতে ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন। সেখানেই কাজ শেখেন তিনি। সত্তর শতাংশ যুবক যেমন সাধারণ কর্মচারী থেকে কারিগর হয়ে অন্যের দোকানেই কাজ করে জীবন কাটিয়ে দেন অমলেন্দু তা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন কাজ শিখে অল্প হলেও পুঁজি নিয়ে নিজের রাজ্যে নিজের এলাকায় ফিরে নিজেই একটা দোকান করবেন। সেই দোকান একটু বড় হলে, একটা কারখানা করবেন যেখানে নিজের এলাকার দু’দশটা ছেলে কাজ করবে। এদের আর কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যেতে হবেনা। অন্ততঃ কয়েকটা ছেলে তো বাড়ি থেকে কাজ করতে পারবে।
গত বছর লকডাউন চালু হওয়ার আরও কিছুদিন আগে ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসেন অমলেন্দু। কয়েকবছর বাইরে কাজ করার সুবাদে সঞ্চিত কিছু অর্থ দিয়েই বাবার পাশে এসে দাঁড়ান অমলেন্দু। ধিরে ধিরে ব্যবসা দাঁড় করানোর লড়াই শুরু হয়। সেই ব্যবসা যখন সবে মাত্র মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে তখনই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। এরপর লকডাউন আর আনলকের সাপলুডোর মধ্যে দিয়ে চলেছে মাইতি জুয়েলার্সের ব্যবসা যা শেষ অবধি সোমবার রাতে প্রায় মাটিতে পুঁতে দিয়ে গেল চোরের দল।
অমলেন্দুর কথায়, চুরি যাওয়া ওই আর্থিক পরিমান হয়ত সোনার ব্যবসায় কিছুইনা কিন্তু আমার কাছে ওটাই বলতে গেলে পুঁজি। গত কয়েক বছরে এই ছোট্ট বাজারে ব্যবসা করে তিল তিল করে যে পুঁজি তৈরি করতে পেরেছিলাম তার পুরোটাই তো চলে যাবে চুরি যাওয়া সম্পদের খেসারত দিতে। এরপর কী দিয়ে ফের ব্যবসা দাঁড় করাবো? আমাকে হয়ত ফের ফিরে যেতে হবে অন্য রাজ্যে, অন্যের দোকানে কাজ করার জন্য।