নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী ৭ দিনের জন্য সম্পুর্ন লকডাউনের আওতায় চলে এল খড়গপুর ও মেদিনীপুর পৌর এলাকায়। খড়গপুরের ৩৫টি ও মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫টি ওয়ার্ডকে আনা হয়েছে কনটেনমেন্ট জোনের আওতায়। আর সেই নিয়ম অনুসারে ৮ই জুলাই থেকে ১৪ই জুলাই দুই শহরের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, হাট, বাজার বন্ধ করে দেওয়া হল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও কন্টেনমেন্ট জোনের নিয়ম অনুসারে সংক্রমিত বলে ঘোষিত এই এলাকার মধ্যে কোনও গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু থাকার কথা নয়। অর্থাৎ বাস, ট্রেন, অটো, টোটো ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় থাকা নাগরিকরা শহরের বাইরে যেতে পারবেননা।
৬ই জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসক রশ্মি কোমল স্বাক্ষরিত এই নির্দেশিকা অনুযায়ী (১) সমস্ত সরকারি, বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। (২) জরুরি নয় এমন সমস্ত পরিষেবা বন্ধ থাকবে (৩) সমস্ত ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ তা ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক যাই হোকনা কেন। (৪) সমস্ত পরিবহন নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে দু’চাকাও নিষেধাজ্ঞার আওতায়। (৫) সমস্ত বাজার, কারখানা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে যে এই জোনের আওতাধীন ব্যক্তিরা কোনও সরকারি, বেসরকারি অফিসে যেতে পারবেননা এবং তাঁদের যে কোনও যাতায়াতকেই কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হবে। এই বক্তব্যের সারমর্ম হল মেদিনীপুর ও খড়গপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা আগামী বৃহস্পতিবার (৮ই জুলাই) থেকে আগামী বুধবার (১৪ই জুলাই) অবধি এলাকার বাইরে বেরুতে পারবেননা আর বাইরে থেকে কেউই এই সংক্রমিত জোনে প্রবেশ করতে পারবেননা।
শুধু খড়গপুর ও মেদিনীপুর পৌর এলাকাই নয় তার সাথে এই একই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে ঘাটাল, কেশিয়াড়ী, বেলদা ও নারায়নগড় থানা এলাকার কয়েকটি জায়গাতে। যার মধ্যে সর্বাধিক এলাকা রয়েছে ঘাটালে। ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’ সুনির্দিষ্টভাবে জানাচ্ছে কোন কোন এলাকায় এগুলি করা হয়েছে। ঘাটালের (ক) নিশ্চিন্দিপুর। বলা হচ্ছে নিশ্চিন্দিপুর দুধের বাঁধ থেকে নিশ্চিন্দিপুর স্কুল এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায়। (খ) দলপতিপুর। দলপতিপুর নব প্রাইমারি স্কুল থেকে পাত্র পাড়া মনসা মন্দির অবধি ওই জোনের আওতায়। (গ) কুশমান দলুইপাড়া। কুশমান শিবমন্দির থেকে কুশমান স্মৃতিসঙ্ঘ।(ঘ) কৃষ্ণনগর। কৃষ্ণনগর বেরাপাড়া থেকে কৃষ্ণনগর সিনেমা তলা (ঙ) কোন্নগর,মহাপাত্র পাড়া। কোন্নগর ইরিগেশন অফিস থেকে মহাপাত্র পাড়া। (চ) কুশপাতা, দূরভাস পাড়া। কুশপাতা পেট্রলপাম্প থেকে উত্তর কুশপাতা, ঘাটাল পাঁশকুড়া রাস্তার পশ্চিম দিক। (ছ) মন্ডলপাড়া, গম্ভীরনগর। পুরো মন্ডলপাড়াই।
গড়বেতা থানা এলাকার সাতবাঁকুড়া মাষ্টারপাড়াকে কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় এনে তাঁর গন্ডি নির্দেশ করা হয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রয়াগ হোটেল থেকে মাস্টারপাড়া অবধি।
নারায়নগড় থানা এলাকার সম্পূর্ণ (১) মহম্মদপুর, এবং(২) পুরো মকরামপুর বাজার কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায়। বাজার বন্ধ থাকবে। বেলদা থানা এলাকার (১)শুশিন্দা,(২) উকরান্ডা,(৩) বাখরাবাদ সম্পুর্ন ওই জোনের আওতায়। কেশিয়াড়ী থানা এলাকার (১)হাসিমপুরকে গন্ডীবদ্ধ করা হয়েছে তলকেশিয়াড়ীতে অবস্থিত উত্তরে ঔরঙ্গাবাদ গ্রামের প্রান্ত থেকে দক্ষিণে চাষের জমি আর পূর্বে কাশিপুর ও পঞ্চাননপুরের প্রান্ত থেকে শুরু করে পশ্চিমে চাষের জমি অবধি।(২) সম্পুর্ন খাজরা গ্রাম এবং (৩) এলাসাই। এলাসাইয়ের সীমানা নির্দেশ করতে গিয়ে বলা হয়েছে। উত্তরে বাঁশবনি, দক্ষিণে মির্জাপুর, পূর্বে মুড়াকাটা এবং পশ্চিমে বেগমপুর।
এদিকে মঙ্গলবার রাতেই এই অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় এবং বুধবার থেকেই তা কার্যকরি হবে বলায় সমস্যা তৈরি হয়ে যায় সর্বত্রই। পুলিশ এবং প্রশাসনের নিচুতলায় এই নির্দেশেকার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যেমন সমস্ত বাজারই যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে মানুষ খাবে কী? সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলির যে কাজ বুধবারের জন্য বকেয়া ছিল তার কী হবে? যে মানুষ শহরে এসে একদিনের জন্য থেকে গেছেন কিংবা যিনি শহরে আসার জন্য বেরিয়ে রাস্তায় আছেন। তিনি কী করবেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপরই রাতের দিকে ঠিক হয় আরও ২৪ঘন্টা সময় দেওয়া হবে কন্টেনমেন্ট জোন চালু করতে। আর সেই হিসাব অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কন্টেনমেন্ট বিধি কার্যকরী হবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য যে সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলির শীর্ষ আধিকারিকরা প্রশাসনকে সচল রাখার স্বার্থে অফিসে আসতে পারবেন এবং সেই কারণে তাঁদের নির্দেশ অনুসারে কোনও কর্মী অফিস যেতে পারবেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে চলতি লকডাউনের বিধিনিষেধের কারনে সংক্রমনের সংখ্যা আশাতীত ভাবেই কমে এসেছে। সেই ধারাকে আরও ন্যূনতম করার লক্ষ্যে এখনও সংক্রমন থেকে যাচ্ছে এমন এলাকা গুলোকেই কন্টেনমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে যাতে আর সংক্রমন ছড়িয়ে না পড়ে।