নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে খড়গপুর এবার হারালো শহরের এক বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞকে। একই দিনেই ওই এলাকায় মৃত্যু হল ৫২ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির। মাত্র ৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি মৃত্যুর খবর এসেছে কলকাতা এবং শালবনী থেকে। এদিন রাত ৯টা নাগাদ কলকাতার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতাল খবর এসে পৌঁছায় যে শহরের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী প্রয়াত হয়েছেন সল্ট লেকের আমরি হাসপাতালে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে প্রায় ১৫ দিন আগে করোনা চিহ্নিত হওয়ার পরই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই বেসরকারি হাসপাতালে। প্রথমদিকে অবস্থা কিছুটা ভালো হয়ে উঠলেও গত কয়েকদিন ধরে সঙ্কটের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন তিনি। করোনার সঙ্গে বেশকিছু কোমর্বিডিটি ছিল তাঁর। ফলে সত্তরোর্ধ ওই চিকিৎসকের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। শেষ অবধি ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে যদিও শেষরক্ষা হয়নি। রবিবার রাত আটটার কিছু পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
খড়গপুর শহরে স্থায়ীভাবে আধুনিক চোখের আধুনিক চিকিৎসার সূত্রপাত হয় ডাঃ বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর হাত ধরেই। এমনটা নয় যে এই শহরে তার আগে চোখের আধুনিক চিকিৎসা হতনা। বাইরে থেকে চিকিৎসকরা আসতেন বিভিন্ন চেম্বারে কিংবা হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা হত কিন্তু
সাবেক খড়গপুর হাসপাতালে দায়িত্ব নিয়ে আসার পর প্রেমবাজার লাগোয়া হিজলী সোসাইটিতে বাড়ি করার পর নিজের বাড়িতেই একটি স্থায়ী আধুনিক চেম্বার তৈরি করেন তিনি। এরপরে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হলে বেশ কিছুদিন এখান থেকেই যাতায়াত করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে পাকাপোক্ত ভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। সহজ সরল খোলামেলা ব্যবহারের জন্য মানুষ ভালো বাসতেন তাঁকে। খড়গপুর শহরতো বটেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাতেন তাঁর ভুবনরেখার বাড়িতে।
খড়গপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কিংবা অধুনা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি ভুবনরেখার বাড়িতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার সময় যে ফিজিসিয়ান স্যাম্পল পেতেন তা জমা রাখতেন গরিব মানুষের জন্য। শহরের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কাজ করতেন বিনা পারিশ্রমিকে। অসংখ্য চক্ষুপরীক্ষা শিবিরে স্বেচ্ছাশ্রম দিতেন। তাঁর মৃত্যুতে খড়গপুর শহর একজন প্রকৃত মানবদরদী চিকিৎসককে হারালো। উল্লেখ্য কোভিডের প্রথম ধাক্কায় খড়গপুর হারিয়েছিল ডাঃ গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, ডাঃ ডি.এন পালের মত চিকিৎসকদের।
এদিকে এদিনই বেলা আড়াইটা নাগাদ মৃত্যু হয় হিজলী সোসাইটি এলাকার পাশাপাশি এলাকা ডিভিসি মায়াপুরের বাসিন্দা দেবব্রত দাসের। মাত্র ৫২ বছর বয়সী দাস কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পরই খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে নিয়ে যাওয়া হয় শালবনী করোনা হাসপাতালে। ভর্তি করা হয় এইচডিইউতে। অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয় কিন্তু সুগার জনিত কো-মর্বিডিটি থাকায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছিলনা।
রবিবার সকালের দিকে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ২৮ শতাংশে নেমে আসে। ক্রমশঃ কোমায় চলে যান দাস। বেলা আড়াইটা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। এমনিতেই জেলার মধ্যে খড়গপুর শহরে করোনার প্রকোপ বেশি। তার ওপর হিজলী সোসাইটি, ডিভিসি এবং তালবাগিচায় আক্রান্তর সংখ্যা বেশি। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে তালবাগিচা এবং ডিভিসি এলাকায় আগেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এবার একই দিনে এই এলাকায় দুজনের মৃত্যু হল।