ওয়েব ডেস্ক : করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে লকডাউন শুরু হওয়ার পরও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না সংক্রমণ। এই নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন হাসিনার প্রশাসন। এরমধ্যেই বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও বিপাকে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে৷ ইতিমধ্যেই ওই দেশের মোট ১৭টি জেলা বন্যায় কবলিত। তার ওপর গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬টি জেলায় প্রচুর পরিমাণে জল ঢুকতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের ১৪টি নদীর জল ২২টি জেলায় ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই জেলাগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রশাসনের কর্তাদের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর জল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে৷ পাশাপাশি আগামী ১২ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি ও ফরিদপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলের আরও কয়েকটি নদীর জল বিপদসীমার উপরে চলে যেতে পারে। এতে এই দুই অঞ্চলের আরও কয়েকটি জেলায় বন্যার সম্ভাবনা হতে পারে। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং আপার মেঘনা অববাহিকার নদীগুলিতে ক্রমশ জল বাড়ছে। তবে তিস্তা ও ধরলা নদীতে জল কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এর জেরে বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হতে পারে। এদিকে ক্রমশ জল বাড়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের বাড়িগুলিতে বন্যার জল ঢুকে পড়ছে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে বেশিরভাগ মানুষই বাড়িঘর ছেড়ে গরু ও ছাগল নিয়ে ইতিমধ্যেই ত্রাণ শিবির ও উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। জেলাগুলির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে বন্যায় রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পাবর্ত্য এলাকায় মুহুরি নদীর ৬ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজীর ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে নীলফামারি, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, রাজবাড়ী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী মানিকগঞ্জের আরিচা, পদ্মা নদী মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল ও মাওয়া এবং কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শেরপুরে বন্যার অবনতি হতে পারে। জল বাড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের নদী সাঙ্গু, হালদা, মুহুরি এবং মাতামুহুরিতেও। এর ফলে বান্দরবান ও কক্সবাজার-সহ আশপাশের জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত এলাকাগুলিতে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার, স্যালাইন ও বিভিন্ন ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে প্রশাসন। বন্যাকবলিত সিলেট সদর উপজেলায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে নতুন করে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মূলতঃ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বৃষ্টি না হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনার জলের সমতল বাড়ছে না। তাই এখানকার বন্যা পরিস্থিতি আরও ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে অনুমান করা হচ্ছে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলার ১৫টি স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ৬০ মিলিমিটার। তবে সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে লালাখালে ১৬০ মিলিমিটার। অন্যদিকে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যেও ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৮৪ মিলিমিটার আর অসমের শিলচরে ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে সিকিমে বৃষ্টির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। যে কারণে বন্যা বিশেষজ্ঞদের তরফে তিস্তা ও ধরলায় বন্যার জলপ্রবাহ হ্রাসের আশা করছেন।