ওয়েব ডেস্ক : বিরোধীদের অভিযোগ ছিল লাগাম ছাড়া দুর্নীতি হচ্ছে আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে। কিছুদিন আগেই আমফানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে ব্যাপক দলবাজি আর দুর্নীতির কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন ২০২১ বিধানসভায় তৃনমূলকে জিতিয়ে আনার পরামর্শ দাতা প্রশান্ত কিশোর। ভোট কুশলী পি.কে জানিয়ে দেন এভাবে চললে তৃনমূলকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। এবার কার্যত বিরোধীদের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেরই দলের নেতা কর্মীদের সেই দুর্নীতিগ্রস্ত অংশের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। জনগনের উদ্দেশ্যে জানালেন ক্ষতিপূরন দেওয়ার বিনিময়ে কেউ টাকা চাইলে পুলিশকে লিখিত অভিযোগ করুন
।
বিগত কয়েক মাসে ভারত তথা রাজ্যে জাঁকিয়ে বসেছে করোনা। তার ওপর আবার ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হয়৷ কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সেই ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের নেতা কর্মীদের ওপরে। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে আসলে যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা তো ক্ষতিপূরণ পায়ই নি বরং সে টাকা ঢুকেছে শাসকদল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের অ্যাকাউন্টে। ইদানিং মাঝে মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওর মাধ্যমে বহুবার নিজের লোকসভা কেন্দ্রের পঞ্চায়েত স্তরের কাজের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সেই নিয়েই বুধবার দলীয় কর্মীদের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এবার থেকে ত্রানের টাকা কিংবা রেশনের ক্ষেত্রে কোনওরকম অসুবিধা হলে সরাসরি পুলিশকে চিঠি লেখার কথা বলেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমফানে ক্ষতিপূরণের টাকা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে। এক্ষেত্রে টাকা পাওয়ার জন্য যদি কেউ ফর্ম বা অন্য কোনো কিছুর জন্য টাকা দিতে বলে তবে ভুলেও সেপথে হাঁটতে না করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, রেশন কিংবা আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের যদি ক্ষতিপূরণ বা অন্যান্য বিষয়ে কোনোরকম অভিযোগ থাকে তবে সেক্ষেত্রে সরাসরি পুলিশের কাছে চিঠি লিখলে পুলিশ বিষটির সমাধান করবে। শুধু এটুকু বলেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এদিন তিনি পুলিশকেও নির্দেশ দেন, তারা যেন শক্ত হাতে চিঠি গুলি প্রাথমিকভাবে সত্যতা যাচাই করেন এবং রাজ্যের মানুষ যাতে তাদের প্রাপ্ত টাকা ঠিক মতো পায়, সেদিকে যেন নজর রাখেন। তবে যদি সমস্যা কোনোভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে সেক্ষেত্রে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর কথাও বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের বদলে শাসক দলের নেতা কর্মীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নিয়েছেন, এমনকি করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রেশন বণ্টন নিয়ে নানা জলঘোলা হয়েছে। তাই আমফানের ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয় তাই আগে থেকেই সতর্ক রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি পুলিশকে জানান, যদি কোথাও কোনোপ্রকার দুর্নীতির অভিযোগ আসে তবে সেক্ষেত্রে তারা যেন কোনওভাবেই রং না দেখে সরাসরি ব্যবস্থা নেন।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন নির্দেশে স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হচ্ছে রাজ্যের নেতা কর্মীদের ওপর ভরসা হারিয়েই এবার থেকে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিজেই সমাধানের চেষ্টা করার কথা ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, ২০২১ এর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি অনেকটাই কাজে লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।