নিজস্ব সংবাদদাতা: আসানসোলের প্রশাসক পদ থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারির অপসারণে স্থানীয় তৃনমূল কর্মীরা যতটাই নিস্পৃহ ঠিক ততটাই ক্ষুব্ধ শিক্ষক তথা যুব নেতা অশোক রুদ্রের অপসারণের ঘটনায়। সেই ক্ষুব্ধতা এমন জায়গাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ পর্যন্ত জানাতে দ্বিধা করেননি তাঁরা। মঙ্গলবার বার্নপুরে সহস্রাধিক শিক্ষক অধ্যাপকের সেই বিক্ষোভ মিছিল বুঝিয়ে দিয়েছে তৃনমূলের দারুন এই দুঃসময়ে নতুন করে ফাঁড়া হয়ে দাঁড়াচ্ছে দলীয় সমর্থক এবং সক্রিয় সদস্যদের একটি অংশ।
মঙ্গলবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে শিক্ষক অধ্যাপকদের সেই মিছিল মৌন ছিল ঠিকই কিন্তু মৌনতার আড়ালে যে গভীর ক্ষোভ ও ধিক্কার তাঁরা অন্তর থেকে প্রকাশ করেছেন তা পরিষ্কার হয়ে গেছে তাঁদের শরীরী ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজে। সবচেয়ে বড় কথা এই মৌন প্রতিবাদ মিছিলে তৃনমূলের সাধারণ সমর্থক শিক্ষক সমাজ যেমন হাজির হয়েছিলেন তেমনই মুখ দেখা গিয়েছে ওয়েবকুপা অর্থাৎ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের সঞ্জীব পাণ্ডে, বীরু রজক, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজীব মুখার্জী ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির হিমাদ্রি শেখর পাত্র, সৌম্যদীপ ঘোষ,যদুনাথ রায়ের মত সামনের সারির নেতৃত্বদেরও। ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে মঙ্গলবার, অন্ততঃ পাঁচহাজার শিক্ষক শিক্ষিকাদের মৌনমিছিল পরিক্রমা করেছে বার্নপুর শহর।
পূর্ব বর্ধমান তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রাজীব মুখার্জী বলেন, ‘ কোনও প্রশাসনিক পদে না থাকা স্বত্বেও করোনা পরিস্থিতিতে অশোক রুদ্র যেভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে লড়াই করেছিলেন তার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং মমতা ব্যানার্জী। মূখ্যমন্ত্রী লিখিত ভাবে অশোক রুদ্রের নেতৃত্বে শিক্ষক সংগঠনের কাজের প্রশংসাও করেছিলেন আর সেই কারণেই কাউন্সিলর না হওয়া সত্বেও দিয়েছিলেন প্রশাসকের দায়িত্ব। যদিও তাঁর সারা রাজ্যব্যাপী কাজের পরিধি ও পরিচিতির নিরিখে এই পদপ্রাপ্তি আঞ্চলিক ভাবে বেঁধে দেওয়ার প্রচেষ্টা হলেও, অশোক রুদ্র তিন মাস দায়িত্ব পেয়ে মানুষের পাশে থেকে প্রশাসক হিসাবে কাজ করার জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মানুষের কাছে। তৃনমুল কংগ্রেসের কোর কমিটির সদস্য অশোক রুদ্রকে দায়িত্ব দিয়ে এইভাবে তিনমাসের মাথায় ছাঁটাই করায় অপমান করা হয়েছে সমস্ত শিক্ষক মহলকেই। যে কারনেই শিক্ষকদের মধ্যে এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ।”
তৃনমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র কে হঠাৎই নতুন প্রশাসকমন্ডলী থেকে বাদ দেওয়ার পেছনে কলকাতা ও পূর্ব বর্ধমানের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের কারসাজি রয়েছে বলেই মনে করছেন রুদ্রের অনুগামীরা। তাঁর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে কায়েমী স্বার্থের কিছু তৃনমূল নেতা মমতা ব্যানার্জীকে ভুল বুঝিয়ে এই কাজ করেছেন বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাঁরা আরও মনে করছেন এভাবেই মূখ্যমন্ত্রীকে হয় অন্ধকারে রেখে অথবা ভুল বুঝিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে যাতে দলের ব্যাপকতর ক্ষতির পথ প্রস্তুত হচ্ছে।
এমনিতেই অশোক রুদ্রকে অপসারন করা হয়েছে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোস্যাল মিডিয়াতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন জেলার তৃনমূল সংগঠনের ছাত্র, যুব ও শিক্ষকরা। নিজেদের ওয়ালে অনেকেই লিখেছিলেন, তৃনমুল কংগ্রেসের মূল দলে শিক্ষিত মানুষকে দায়িত্ব না দেওয়া ও শিক্ষক সংগঠনকে গুরুত্ব না দেওয়া একটা স্থায়ী রোগের মধ্যেই পড়ে। তার ওপর তরুন শিক্ষক নেতাকে যেভাবে পেছন থেকে টেনে ধরে ডানা ছাঁটার ঘটনা ঘটল তাতে আরও একবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সেই মন্তব্যই প্রতিষ্ঠিত হল যে তৃনমূলে শিক্ষিত মানুষের জায়গা নেই।”
পূর্ব বর্ধমান তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সভাপতি হিমাদ্রি শেখর পাত্র বলেন, ‘শিল্প অঞ্চলের বিরোধী দল, তৃনমুল দলের মিনি পাকিস্তানের ঘটকের কারসাজির পাশাপাশি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন অশোক রুদ্র যদিও আদতে আদতে বলি দেওয়া হল একজন মানবিক ও শক্তিশালী সংগঠককে যার মূল্য চোকাতে হবে তৃণমূলকেই। সারা রাজ্যের সাথে এই শিল্পাঞ্চলও দলের জন্য কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে হাজির হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুবিধাবাদীরা সরে পড়বেন কিন্তু তার আগেই কলকাঠি নেড়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যোগ্য সংগঠকদের। তাহলে বাকি রইল কী?”