Homeঅন্যান্যমমতার চটি-পুলিশ তত্ত্বেই কী ভোটের দিন উত্তপ্ত হতে পারে নন্দীগ্রাম? তৃনমূলের মহিলা...

মমতার চটি-পুলিশ তত্ত্বেই কী ভোটের দিন উত্তপ্ত হতে পারে নন্দীগ্রাম? তৃনমূলের মহিলা বাহিনীকে ঠেকাতে কেন্দ্রীয় পুলিশের ৩০ প্রমীলা জওয়ান ঘিরে রাখবেন শুভেন্দুকে

নিজস্ব সংবাদদাতা: নন্দীগ্রামে ঘোরতর সঙ্কটের মুখে তৃনমূল কংগ্রেস। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হারলেও হেরে যেতে পারেন। তৃনমূলের আচার আচরণ, মুখ্যমন্ত্রীর বিজেপি নেতাকে ফোন করে তাঁর হয়ে কাজ করতে বলা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রচন্ড চাপে রয়েছেন তিনি। বিজেপি এমনকি অনেক সাধারণ মানুষও মনে করেন যে হারের ভয়েই সহানুভূতির ভোট চাইতে হুইলচেয়ার ব্যবহার করছেন তিনি। আবার কারও কারও মতে এই টাইট লড়াইয়ের মোকাবিলা করার মত পরিশ্রম করার মত ক্ষমতা তাঁর নেই বলেই হুইল চেয়ারে বসেই সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন সরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহার করে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী এই কেন্দ্রে হেরে যেতে পারেন এই চিন্তায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে নন্দীগ্রামের এবং রাজ্যের তৃনমূল কর্মীদের মধ্যে। বিজেপির অভিযোগ সেই জায়গা থেকেই বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর প্রচারে বাধা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রচারে গিয়ে বারবার হামলা আর বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে অধিকারীকে। এই বিক্ষোভের সামনের ভাগে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের।

যদিও বিপরীতে এও অভিযোগ যে, এই কায়দা অবশ্য শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকেই তৃনমূল কর্মীরা শিখেছেন। বিপক্ষকে প্রচার করতে না দেওয়া, বিরোধীদের ওপর হামলা করা, প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গোপন জায়গায় রেখে আতঙ্কগ্রস্ত করা, পুলিশের মামলা দেওয়া, মহিলা প্রার্থীর স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া এসব শুভেন্দু অধিকারীর নিজস্ব পেটেন্ট যা তিনি হলদিয়া পুরসভা এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োগ করেছেন একসময়। এখন তাঁর ভাব শিষ্যের দল তাঁরই বিরুদ্ধে গুরুমারাবিদ্যা হিসাবে প্রয়োগ করছে। ফলে বিপদে পড়েছেন তিনি। ভোটের দিনও যাতে বুথে বুথে এই বিক্ষোভের মুখে না পড়তে হয় কিংবা কোনো একটি জায়গায় সারাদিনই যাতে না আটকে রেখে দেওয়া হয় তাই নিজের দলের কাছে বকলমে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তিনি আর সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাঁর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী বা সিআরপিএফের ৩০ জন প্রমীলা জওয়ান। নিজের জেড ক্যাডাগরি নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে আরও ৩০ জন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী পেয়ে নিশ্চিত ভাবেই অনেকটা সুবিধা পেয়ে গেলেন অধিকারী।

পুলিশের একটি অংশ দাবি করেছে শুভেন্দুর আরও বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বলেছেন ২০০৭ সালের ১৪ই মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনায় যে চটি পরা পুলিশ দেখা গিয়েছিল তারা আদতে শুভেন্দু এবং শিশির অধিকারীর পাঠানো গুন্ডা যারা পুলিশের পোশাক পরে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল। বাস্তবিকই মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি বিভ্রান্তির মুখে ফেলেছে নন্দীগ্রামকে। তৃনমূলের একটা অংশ বরাবরই মনে করত ১৪ই মার্চের ঘটনার মধ্যে একটা রহস্য আছে। কারন ওই দিন ১৪জন মারা গেছিল ঠিকই কিন্তু সবাই গুলিতেই মারা যায়নি। ৫জন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং একজন বোমার আঘাতে মারা যায়। ওই সময় অনিন্দিতা সর্বাধিকারীর একটি তথ্য চিত্রে ভুক্তভোগী নন্দীগ্রামবাসীর অনেককেই বলতে দেখা গিয়েছে যে ১৪ই মার্চের ঘটনা পুরোটাই একটা গভীর চক্রান্ত যাতে কিনা শুভেন্দু অধিকারী ও মাওবাদীদের হাত রয়েছে। তারপরই নির্বাচনের মুখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই চটি পুলিশের তত্ত্ব কিছুটা হলেও অসুবিধা করে দিয়েছে নন্দীগ্রামের ঘরের ছেলে বলে দাবি করলেও শুভেন্দুকে। আর তাই এবার শুভেন্দুর নিরাপত্তায় অভিনব মহিলা সুরক্ষা বলয় যা আগে কোনও দিন বাংলার নির্বাচনে দেখা যায়নি।

বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নন্দীগ্রামের প্রচারে গেলেই শুভেন্দুকে বাধা দিতে ফন্দি ফিকির বার করছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত কয়েকদিন ধরে শুভেন্দু অধিকারীর প্রচারে সমস্যা তৈরি করতে দলে দলে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরছেন। সুরক্ষা বলয়ে থাকা পুরুষ নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের সরাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ঠিক একই কায়দা নেওয়া হতে পারে নির্বাচনের দিন যাতে শুভেন্দু সব বুথে ঘুরতে না পারেন। সেই সমস্যার সমাধানে এবার শুভেন্দুর নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হল ৩০ জন মহিলা সিআরপিএফ।

এই বিষয়ে তমলুক জেলার সাংগঠনিক সহ–সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‌বিজেপির বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস মহিলা কর্মীদের এগিয়ে দিচ্ছে। শুভেন্দুর কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’‌ উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসের শেষে রাজ্য সরকারের জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ছেড়ে দেন শুভেন্দু। আর বিজেপিতে যোগ দেওয়া মাত্রই তাঁকে ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। মেলে বুলেটপ্রুফ গাড়িও। কিন্তু তাতেও বারবার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে শুভেন্দুকে। আর ভোটের তাই শুভেন্দুর নিরাপত্তা বলয়ে যুক্ত করা হল মহিলা সিআরপিএফ–কে।

বিজেপি আরও দাবি করেছে নন্দীগ্রামের মাটি থেকে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মা–বোনেদের’ রুখে দাঁড়ানোর নাম করে মহিলাদের উস্কে দিয়েছেন ‘হাতা খুন্তি’ নিয়ে ভোটের ময়দানে লড়াইয়ের নামার জন্য আর তাতেই বিভিন্ন জায়গাতেই বিক্ষোভে দেখা গিয়েছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের। সে কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

 

RELATED ARTICLES

Most Popular