অনির্বান ইসলাম: বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বড়সড় খুশির খবর বাম শিবিরে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শেষ অবধি নিজের জেলায় ফিরছেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের নিয়োজিত আইনজীবীর সমস্ত যুক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়ে এমনই রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সাড়ে ৯ বছর ধরে নিজের জেলার বাইরে ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের একাধিক মামলায় জামিন পেলেও সরকার তাঁর জেলায় প্রবেশ আটকানোর জন্য মরিয়া হয়েছিল। সুপ্রিমকোর্টে তাঁর জামিন আটকানো মুশকিল হয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে রাজ্য সরকারের আইনজীবী মরিয়া আবেদন ছিল অন্ততঃ তিনি যাতে জেলায় প্রবেশ না করতে পারেন। আদালত সেই শর্তেই জামিন দিয়েছিলেন তাঁকে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ফের ২০১২ সালে আপিল করেন দীর্ঘ সাত বছরের লড়াই শেষে অবশেষে জয় পেলেন সুশান্ত ঘোষ। এবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডের বাড়িতে ফেরার আর কোনও বাধা রইলনা।
উল্লেখ্য সরকার পরিবর্তনের পরই বেনাচাপড়া সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত করা হয় প্রাক্তন এই মন্ত্রীকে। প্রথমে পুলিশ এই মামলা শুরু করলেও পরে মামলার দায়িত্ব নেয় সিআইডি। সিপিএমের দাবি, যদিও আজ অবধি একটি মামলাতেও চার্জশিট গঠন করতে পারেনি সিআইডি। ফলে এই মামলায় অভিযুক্ত প্রায় প্রত্যেকেই জামিন পেয়ে যান একে একে। জামিন পান সুশান্ত ঘোষও কিন্তু তাঁর নিজের জেলায় ফেরা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, এবারেও রাজ্য সরকারের নিযুক্ত আইনজীবী আর বসন্ত সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন যে, বিধায়ক না থাকা স্বত্ত্বেও তিনি প্রভাবশালী তাই তাঁর জেলায় ফেরা নিষিদ্ধ থাকুক। তিনি জেলায় ফিরলে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে তাই তাঁকে জেলায় না ফিরতে দেওয়া উচিৎ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তাঁর প্রভাব অটুট তাই তিনি মামলা প্রভাবিত করতে পারেন। কিন্তু সমস্ত যুক্তি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর ওপর থেকে জেলায় ফেরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, দ্য খড়গপুর পোষ্টয়ের সঙ্গে কথা হয় বর্তমান নয়া দিল্লিতে থাকা সুশান্ত ঘোষের। ঘোষ জানিয়েছেন,”হ্যাঁ, জেলায় প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আমি আলোচনা করছি কবে জেলায় ফেরা যায়। নিজের মাটিতে, নিজের মানুষ আর কমরেডদের দেখার জন্য আমিও উদ্বেল হয়ে আছি।” এর আগে সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছিলেন, ” সরকার অনেককেই বিনা অপরাধে মামলায় জড়িয়েছে কিন্তু আমার মত প্রতিহিংসার রাজনীতি খুব কম জনের সঙ্গেই হয়েছে কারন আমাকে বছরের পর বছর ধরে আমার নিজের জেলায় ফিরতে দেওয়া হয়নি।”
এদিকে সুশান্ত ঘোষ যেমন জেলায় ফেরার জন্য উদ্বেল তেমনই সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কানে কানে ছড়িয়ে পড়েছে মঙ্গলবার রাতেই। বিশেষত চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় খুশির হওয়া সিপিএম কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই এই এলাকায় ফের নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে সিপিএম। সেই দৃঢ়তা আর আবেগ নিয়েই সুশান্ত ঘোষকে স্বাগত জানাতে তৈরি হচ্ছে সিপিএমের কর্মী সমর্থক নেতারা। জানা গেছে এই রায় সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি জোগাড় করে কলকাতায় কিছু কাজ সেরে আগামী সপ্তাহেই চন্দ্রকোনা রোডে নিজের বাড়িতে ফিরবেন ঘোষ। সামনের রবিবার সেই কর্মসূচি চূড়ান্ত হতে পারে।
একটি সূত্রে জানা গেছে এই মুহূর্তে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন সিপিএম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির এই সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য। যদিও এটি পুরোপুরি পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। দল বা ঘোষ এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন,” তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল তাঁকে যার মেয়াদ প্রায় শেষ। আমরা এখন তৈরি হচ্ছি তাঁকে স্বাগত জানাতে। তাঁর জন্য এই সময় কালের বৃহত্তম সমাবেশ নিয়ে অপেক্ষা করছি আমরা। শাসকের বুক কাঁপিয়ে চন্দ্রকোনা রোডে হবে সেই সমাবেশ।” স্বাভাবিক ভাবেই বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ঘোষের প্রত্যাবর্তন বাড়তি অক্সিজেন যোগান দেবে সিপিএমকে। এ বিষয়ে মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।