Homeএখন খবরপাড়ায় পাড়ায়, গ্রামের মেলায় জন সংযোগে গড়বেতার বেতাজ বাদশা! সুশান্ত এসেছে গো!...

পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামের মেলায় জন সংযোগে গড়বেতার বেতাজ বাদশা! সুশান্ত এসেছে গো! বলেই প্রনাম করার হিড়িক

পলাশ খাঁ :- কী গো কেমন আছ? ভালো তো ? শান্ত স্বরের এই ডাক টা দীর্ঘদিন কানে না শুনলেও স্বর টা খুবই পরিচিত ছিল তাদের কাছে। তাই চোখের নিমেষে স্বর চিনেই চিৎকার করে বলে উঠলো সুশান্ত এসেছে গো। বলেই ছুটে গিয়ে পায়ে হাত দিয়েই টুক করে প্রণামটা সেরে ফেললেন ৮৫ বৎসরের বৃদ্ধ বরোজামের অমুল্য পান। বয়সের ভারে কাবু, কমেছিল গলার স্বর তবুও অমূল্য বাবুর ওই শীর্ণ গলার চিৎকার শুনেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছে প্রতিবেশীরা।

হাঁই হাঁই করে উঠলেন ঘোষ। “আরে থামো থামো! আমি যে ছোট তোমার থেকে!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। দেখতে দেখতে ভীড় জমে যায় উঠোন জুুড়ে। শুরু হয়ে যায় প্রণাম করার হিড়িক। এমন কি জোরজবরদস্তি করেও আটকানো যায় নি প্রণাম৷ প্রাণামের পাশাপাশি কুশল বিনিময়। নিজের খাসতালুকে জনসংযোগে বেরিয়ে চেনা তাকে যে এখনো সেই পুরানো মানুষ গুলি মনে রেখেছে ভেবেই আবেগ মথিত হয়ে পড়েন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা একদা গড়বেতার বেতাজবাদশা সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। আর কর্মীদের এই উচ্ছাস দেখে চোখের জল মুছতে মুছতেই বলে ফেললেন , বাঙলার হাল ফিরিয়ে দিতে ফের আবার লালে লাল হয়ে উঠবে বাঙলা৷

সামনেই একুশের বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন কে সামনে রেখে শাসক দল রাজ্য জুড়ে শুরু করে দিয়েছে প্রচার। শাসক দলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলা বিজেপিও মাঠে নেমে পড়েছে৷ আর এদিকে ভোট যতই এগিয়ে আসছে শাসক দলের মধ্যে যেন শুরু হয়েছে মহাপ্লাবন। ইতিমধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ফলে এখন মমতা শুভেন্দুর লড়াইয়ের সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। এরই মাঝে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ‘দাপুটে’ সিপিআইএম নেতা সুশান্ত ঘোষ তার নিজস্ব ঢংয়ে এবং চেনা ছন্দে নিজেরই খাসতালুক গড়বেতার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে জনসংযোগে নেমে পড়েছেন। আর সুশান্ত বাবুর এই জনসংযোগকে ঘিরে চিন্তায় পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল ও বিজেপি দুই শিবিরেই। তাদের চিন্তার মূল কারন হলো সুশান্ত বাবুর হাতের তালুর মতো চেনা রয়েছে মেদিনীপুরের মাটির সেন্টিমেন্ট৷ ৩৪ বছরের বাম জামানার সময়ে তিনি ৩২ বছর একটানা বিধায়ক ছিলেন গড়বেতার । তাই কোথায় কখন কি করতে হয় তা জানেন তিনি৷ তার এই নিজস্বতাকে স্বীকার করছেন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি নেতারা। যদিও তার এই জনসংযোগ কে আমল দিতে চাইছেন না দুই শিবিরেরই। কিন্তু তারাও জানেন সুশান্ত ঘোষ মাঠে নামলে ভোটের খেলা অন্যদিকে ঘুরে যেতেই পারে৷ তার উপরে সিপিআইএমের তরফে সুশান্ত বাবুকে জঙ্গলমহলের দুটি জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম সহ বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার একাংশের দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে দল। তিনিও যে এবার ছেড়ে কসুর করবেন না তা ভালোমতোই জানে বিরোধীরা৷

শীত পড়েছে জাঁকিয়ে। শেষ হয়েছে মকর সংক্রান্তি৷ মকর সংক্রান্তির দিন থেকেই গড়বেতার বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয়েছে গ্রামদেবতার পূজো। এই পুজো উপলক্ষে গ্রামে গ্রামে বসছে মেলা। আর সুশান্ত ঘোষ শীতের আবহে এই গ্রামীণ মেলা গুলিকেই বেছে নিয়েছেন জনসংযোগের জন্য৷ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছেন সেই মেলাতে। আর মেলাতে গিয়েই তিনি প্রথমে যাচ্ছেন পরিচিত সেই বাড়ি গুলোর উঠোনে৷ আর তিনি গ্রামে ঢুকতেই ছড়িয়ে পড়ছে ‘সুশান্ত ঘোষ এসেছে গো…’। তারপরেই শুরু প্রণাম হিড়িক।গড়বেতার সারগা, বরোজাম, ঘোষকিরা, ভেদুয়া প্রভৃতি গ্রামের মাটিতে পা দিতে না দিতেই শুরু হয়ে যায় প্রণাম করার হিড়িক৷ এমন কি জোরজবরদস্তি করেও এই প্রণাম বন্ধ করা যায়নি৷ সারগার হারু রুইদাস, গিলা অপুর্ব কৃষ্ণ বসু, গোড়বেড়ার ছতু দোলই, বরোজামের অমূল্য পান। সকলেই সুশান্ত ঘোষ কে কাছে পেয়ে উদ্বেল হয়ে পড়ে। স্থানীয় সিপিএম নেতা চঞ্চল মন্ডল বলেন, সুশান্ত বাবুকে কাছে পেয়ে কেউ তাদের আবেগ চেপে রাখতে পারেন নি৷ তাই কেউ তাকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করছেন তো কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে শুরু করে দেন। বরোজামের ৮৫ বছরের অমূল্য পান সুশান্ত বাবুকে কাছে পেয়ে নিজের বয়সের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। তাকে জড়িয়ে ধরে আদরও করেন তিনি। কিন্তু সুশান্ত বাবুর সঙ্গে দেখা করার দুদিন পরেই অমূল্য বাবু মারা যান৷ হয়তো তিনি সুশান্ত বাবুর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

২০১১ সালের রাজ্যে পরিবর্তনের পালা ঘটে৷ দীর্ঘ তিন দশকের বাম জামানার পতন ঘটে৷ বাম নেতাদের অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়৷ কিন্তু সেই সময়েও সুশান্ত ঘোষ তখনও ভোট মেশিনে দাপট তার ধরে রাখেন। তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থী হেমা চৌবে কে হারিয়ে তিনি জয়ী হন গড়বেতা থেকে৷ এরপরই তৃণমূল সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বেনাচাপড়ার কঙ্কাল কাণ্ডের অভিযোগ তোলে জেলে ভরে দেন৷ যদিও সেই অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় জামিন পেয়ে যান তিনি৷ জামিন পেলেও নিজের জেলাতে ঢোকার অনুমতি পাননি তিনি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে টানা দশ বছর পর জেলায় প্রবেশের অনুমতি পান তিনি। হাইকোর্টের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই গত ডিসেম্বর মাসে সুশান্ত ঘোষ ফিরে আসেন নিজের খাসতালুকে৷ তার এই প্রত্যাবর্তন ঘিরে জেলার সিপিআইএম কর্মী সমর্থকদের মধ্যে একটা জোস ফিরে আসে৷ সেদিনই তাকে দিয়ে একটি সভা করানো হয় চন্দ্রকোনা রোডে৷ সেই জমায়েত ছিল লক্ষনীয়। প্রত্যাবর্তনের সেই মঞ্চ থেকেই তিনি সরকারকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।

নিজের গড়ে ফিরেই তিনি নিজের এলাকায় নিবিড় জনসংযোগে নেমে পড়েছেন। একদিকে সুশান্ত বাবু ফিরছেন অন্যদিকে তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন, এতেই উজ্জিবিত হয়ে পড়েন বাম সমর্থকেরা। ফলে বামেদের ডাকা বনধ ও কৃষি আইনের বিরোধিতায় ডাকা বনধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে এলাকায় ।

জেলায় ফিরেই বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে মাঠ নেমে সুশান্তবাবু গ্রামে গ্রামে জনসংযোগ করছেন এই নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা৷ তাহলে কি এবার নির্বাচনে গড়বেতাতে সুশান্ত ঘোষ এফেক্ট কাজ করবে ?

RELATED ARTICLES

Most Popular