অতীতের লোকযাত্রাঃ ললিতা শবর পালা উপেন পাত্র
অতীতে সুবর্ণরেখা নদী অববাহিকায় লোকযাত্রা বেশ জনপ্রিয় ছিল।স্বল্প পরিসরে দু’চার জন কুশীলব নিয়ে লোকযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো। দু”‘জোড়া করতাল,একটি খঞ্জনী ও একটি পাখোয়াজ দিয়ে কাজ চলতো। কারো বাড়ির উঠোনে বা প্রশস্ত রাস্তায় অভিনয় হতো। কয়েকটি যাত্রাপালা বেশ জনপ্রিয় ছিল,যথা- চিড়িয়া চিড়িয়ানী,ললিতা শবর ও বাঘম্বর পালা।প্রায় চল্লিশ বছর আগে লোকযাত্রা অভিনয় লুপ্ত হয়ে গেছে।
ললিতা শবর লোকযাত্রার যে কাহিনী পাওয়া গেছে তা সংক্ষেপে হল, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ গভীর জঙ্গলের মধ্যে এক শবর সর্দার দ্বারা নীলমাধব নামে পূজিত হতেন।ওড়িশার রাজা স্বপ্নাদেশ পান যে ঐ বিগ্রহকে মন্দির বানিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।ঐ নীলমাধব বিগ্রহকে নিয়ে আসার জন্য রাজা বিদ্যাপতি নামে এক ব্রাহ্মণ যুবককে দায়িত্ব দিলেন।
বিদ্যাপতি জঙ্গলের মধ্যে অন্বেষণ করতে করতে গভীর জঙ্গলে গেলেন এবং পথ হারানো পথিক পরিচয়ে শবর সর্দারের আশ্রয়ে থাকলেন।কালক্রমে শবর সর্দারের কন্যা ললিতার সাথে বিদ্যাপতির প্রণয় হয়।শবর সর্দার প্রতিদিন স্নানান্তে গভীর জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে নীলমাধবের পুজো করেন।
একদিন বিদ্যাপতি শবর সর্দারের কাছে নীলমাধব মূর্তি দেখার বাসনা ব্যক্ত করেন। শবর সর্দার রাজি হন না।কিন্তু কন্যা ললিতার অনুরোধে রাজি হলেও শর্ত রাখেন যে চোখ বাঁধা অবস্থায় বিদ্যাপতিকে যেতে হবে।নীলমাধব দর্শনের পর আবার চোখ বাঁধা অবস্থায় ফিরে আসতে হবে।
বিদ্যাপতি এই শর্তে রাজি হন।ললিতা বুদ্ধি করে বিদ্যাপতির কোমরের গামছায় সরিষা বেঁধে একটা ছোট ফুটো করে দেয়।
নীলমাধব দর্শন পথে ঐ ফুটো দিয়ে সরিষা গলে পড়তে থাকে।নীলমাধব দর্শন সেরে শবর সর্দার বিদ্যাপতিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।বর্ষাগমে ঐ সরিষা অঙ্কুরিত হয়।সরিষা চারা সুত্র ধরে একদিন সুযোগ মতো বিদ্যাপতি ললিতা সহ নীলমাধব মূর্তি নিয়ে রাজার আশ্রয়ে পালিয়ে আসেন।