অশ্লেষা চৌধুরী: একটা সময় ছিল যখন বাংলা জুড়ে শুধুই তাঁরই ছবি! অন্য কেউ ছবি লাগাতে গেলে তাঁর ছবি বড় করে দিয়ে পাশে থাকত যিনি নিজের ছবি প্রচার করতে ইচ্ছুক তাঁর ছোট একটা ছবি। মমতা ব্যানার্জীর সেই সুদিন আর নেই এখন তাঁকে ছাড়াই ছবি ঝুলছে তৃনমূলের অন্য দুই নেতারও ছবি। বনগাঁ থেকে বাঁকুড়া কিংবা হাওড়া থেকে হলদিয়া অথবা কলকাতা থেকে কল্যাণী এখন দুই দাদার ছবিতে ছবিতে ছয়লাপ। এক দাদা সদ্য মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করা শুভেন্দু অধিকারী তো অন্য জন এখনও মন্ত্রী থেকে যাওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুই দাদার অনুগামীদের দৌরাত্ম্যে রীতিমত নাভিশ্বাস উঠছে শাসক দলের। দুজনকে নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই চরম অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। এককথায় শুভেন্দু-রাজীবের চাপে চিড়ে চ্যাপ্টা শাসক দল।
কয়েকদিন আগে অবধি শুভেন্দু নামক ফ্লেক্স দিয়ে যে প্রচার শুরু হয়েছিল এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছেন রাজীবও। তাঁর নামেও একাধিক জায়গায় পোস্টার ঝুলিয়েছেন অনুগামীরা। দলের দুই প্রভাবশালী নেতাকে নিয়ে এখন চরম বিপাকে ঘাসফুল শিবির।
গত তিনদিন ধরে রাজ্য তথা কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে রাজীবের নামে পোস্টার পড়ছে। মঙ্গলবারও পোস্টার পড়ে বনমন্ত্রীর নিজের জেলা হাওড়ায়। টি রোড সংলগ্ন বালি খাল, বালি নিমতলা-সহ একাধিক জায়গায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ পোস্টার দেখা যায়। কোথাও লেখা ‘শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, রাজীবদা ভরসা।’ কোথাও আবার লেখা ‘দিকে দিকে লাখে লাখে, চাইছে মানুষ রাজীবদাকে।’ ‘আমরা দাদার সমর্থক’ ও ‘দাদার ভক্তদের’ নামে দেওয়া হয়েছে পোস্টারগুলি।
অন্যদিকে একই রকম ছবি-সহ পোস্টার-ফেস্টুন পড়েছে বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা ও স্টেট ব্যাঙ্ক মোড়ে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মাচানতলা, স্টেট ব্যাঙ্ক মোড় সহ একাধিক জায়গায় রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত ‘আমরা রাজীব পন্থী’ লেখা ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছে। ওই ফেস্টুনে লেখা রয়েছে, ‘আমরা রাজীব পন্থী। আমরা চলি সমুখপানে, কে আমাদের বাঁধবে, রইল যারা পিছুর টানে, কাঁদবে তারা কাঁদবে। আবার অন্য দিকে ফেস্টুনে লেখা, ‘দিকে দিকে লাখো লাখো চাইছে মানুষ রাজীবদাকে।
বাদ যায়নি বুধবারে গোপালনগরে মমতার সভাও। এদিন সকালে ঠাকুরনগর, গাইঘাটায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে পোস্টার দেখা গিয়েছে। এখানকার স্টেশন চত্বর, রাস্তায় পোস্টারে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে “কাজের মানুষ, কাছের মানুষ”, “ছাত্র-যুবর নয়নের মণি” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বন্যপ্রাণী লাভার্স সংগঠনের তরফে এই প্রচার বলে পোস্টার, ফ্লেক্সে উল্লেখ। ঠিক এমনটাই দেখা গিয়েছিল মেদিনীপুর শহরে। সোমবার সেখানে সভা ছিল মূখ্যমন্ত্রীর। তার আগেই শহরে গুঞ্জন তুলে পড়েছিল শুভেন্দুর নামে পোষ্টার।
এদিকে খোদ কলকাতার দখল নিচ্ছে শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে পোস্টার। বুধবার সকালে একবালপুর বাসস্টপে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ বিজ্ঞাপনের পাশে শুভেন্দুর সমর্থনে বেশ কয়েকটি পোস্টার দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি বেহালা চৌরাস্তায় জেমস লং সরণিতে শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে ‘দাদার অনুগামী’ ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। পোস্টার পড়েছে বেহালা ম্যানটন ও বেহালা ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডেও। আবার খিদিরপুরে কার্স মার্কস সরণিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের একেবারে সামনে শুভেন্দুর সমর্থনে জোড়া ব্যানার চোখে পড়ে। এই সকল জায়গার পোস্টারে লেখা আছে একটাই কথা, ‘মানুষের কাজ করতে পদ লাগে না।’ তবে কে বা কারা রাতের আঁধারে এই পোস্টার লাগিয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে সকলেই।
অপরদিকে মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের বিভিন্ন জায়গাতেও শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে পোস্টার দেখা দিয়েছে। তাতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার বিভিন্ন পংক্তি। তবে এবার প্রচারে আর ‘দাদার অনুগামী’রা নয়, এবার প্রচার শুরু করেছে ‘শুভেন্দু অধিকারী ফ্যান ক্লাব’। শুধু পোস্টারেই থেমে নেই শুভেন্দুর অনুগামীরা। এদিন মেমারির রসুলপুরে রাস্তায় নেমে মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বিতরণ করেন তাঁরা।
সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে যেভাবে দুই দাদার ফ্যান, ফলোয়ার্স বাড়ছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে হয়তো বিপদে পড়ে যেতে পারে ঘাসফুল শিবির। কারণ ঠাকুরনগর, গাইঘাটায় রাজীবের নামে যেসব পোস্টার পড়েছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, এই জায়গাগুলিতে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ থাকে। আর এদিনই বনগাঁ গোপালনগরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট ফেরানোই লক্ষ্য তৃণমূল সুপ্রিমোর। উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। মতুয়া ভোটের বড় অংশ বিজেপি পাওয়ায় এই কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল।