অশ্লেষা চৌধুরী: এতদিন বলা হচ্ছিল তোলাবাজ ভাইপো এবার নতুন শব্দবন্ধ আমদানি করলেন সদ্য তৃনমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই শব্দের নাম ‘ভাতিজা ভেট।’ কাটমানি, তোলাবাজ ভাইপোর পর এই নতুন শব্দ নিশ্চিত ভাবেই আগামী নির্বাচনে বিজেপি কর্মীদের কাছে একটি হাতিয়ার হয়ে গেল। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে একটি পদযাত্রা ও সভা করতে এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বর্তমানে বিজেপির বেশ শক্তিশালী গড়ে রূপান্তরিত হয়েছে দাঁতন। তাই ভিড়ও হয়েছিল চোখে পড়ার মতই। সেই ভিড়ে ঠাসা সভায় শুভেন্দু অন্ততঃ তিনবার উচ্চারণ করলেন এই ‘ভাতিজা ভেট’ শব্দ বন্ধটি।
রবিবার শুভেন্দু বলেন, স্কুলের ছেলে মেয়েদের সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। এমন সাইকেল দেওয়া হচ্ছে যে নতুন সাইকেল সারিয়ে নিতে হচ্ছে আর একেকটি সাইকেল সারাতে খরচ হচ্ছে ৪০০টাকা! এই টাকা আসলে ভাতিজা ভেট। বলাবাহুল্য ‘ভাতিজা’ শব্দটি হিন্দি, যার বাংলা প্রতি শব্দ হল ভাইপো। অর্থাৎ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিষয়টা নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই যে ইঙ্গিত করা হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তোলাবাজ ভাইপো আর ভাতিজা ভেট এই ভাবে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে শুভেন্দুর এই নয়া শব্দ বন্ধে।
এদিন আরও এক জায়গায় শুভেন্দু বলেছেন, “স্কুলে ছেলে মেয়েদের স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে যার প্রকৃত দাম ১৩টাকা আর বিল করা হচ্ছে ২২টাকা। এও সেই ভাতিজা ভেট।” প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, ‘এখন তৃনমূল নেতাদের বলা হচ্ছে, বিজেপিতে যাবিনা। ৫টা করে প্রাইমারির কোটা দেব।” টাকা তোলা শুরু হয়ে গেছে।
রবিবার দাঁতনে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথ জুড়ে রোড শো করতে করতে নেমে আসে বিকেল। তার পর ছিল জনসভা। এদিন তিনি হরে কৃষ্ণ আর জয় জগন্নাথ স্লোগান তুলে সভার সূচনা করেন। আর সভা শুরু করেই নিজের প্রাক্তন দল তথা শাসকদলের উদ্দেশ্যে একের পর এক কামান দাগেন শুভেন্দু। শুভেন্দু বলেন, “২২টা তৃণমূলের সাংসদ তার ১১টার কলকাতার ওইখানে বাড়ি। ৪০টা মন্ত্রী, ১৮টার বাড়ী ওই খানে। মুখ্যমন্ত্রী কোথাকার? ওখানকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোথাকার? ওখানকার। পঞ্চায়েত মন্ত্রী কোথাকার? ওখানকার। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কোথাকার? ওখানকার। আমরা বানের জলে ভেসে এসেছি না! এ লড়াই গ্রামের লড়াই, জেলার লড়াই।” এরপর তিনি বলেন, “উত্তর কলকাতাকে বলব সঙ্গ দিন। আপনাদের জেলা বাটখারা মন্ত্রী পেয়েছে। হাওড়াকে বলব সঙ্গ দিন, ৫০০ বছরের প্রাচীন শহর সঙ্গ দিন। সমবায় মন্ত্রী পেয়েছে, পরে আবার বনমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমি ভিতরে ছিলাম দেখে ঘেন্না ধরে গিয়েছে। কীভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর নাম বদলেছে।”
এরপরেই ডায়মন্ড হারবারে লোকসভা ভোট ও পঞ্চায়েত ভোটে কী হয়েছিল সে কথা বলেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “১৬০০ বুথের মধ্যে ৩০০ বুথে জিতে তিন লক্ষ ভোটে জিতেছে। সবাই জানে কী ভোট হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, এসইউসিআই– কোনও দল প্রার্থী দিতে পারেনি। বিডিও অফিসের সামনে জেহাদিদের বসিয়ে রেখেছিল।”
উল্লেখ্য, আজ বঙ্গ রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম কোন ২০-২০ ম্যাচের স্টেডিয়ামের থেকে কিছু কম ছিল না। আর এই ২০-২০ ম্যাচের দুপক্ষের ক্যাপ্টেন অভিষেক-শুভেন্দুকে ঘিরে ছিল টানটান উত্তেজনা। একদিকে ডায়মন্ড হারবাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা এবং দাঁতনে ছিল সদ্য তৃণমূল ত্যাগী শুভেন্দুর সভা। এদিন প্রথমে রোড শো করেন শুভেন্দু। রোড শো–তেও রীতিমতো জন প্লাবন লক্ষ্য করা যায়। রোড শো থেকেই ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও, আমফানের টাকা চোর হঠাও, একশো দিনের টাকা চোর হঠাও, প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার কাটমানিখোর হঠাও’- এসব স্লোগান শোনা যায় শুভেন্দুর কন্ঠে। পাশাপাশি বিরোধী পক্ষকে কটাক্ষ করে ফিল্মি কায়দায় তিনি বলেন, ‘এ তো সবে ট্রেলার, সিনেমা এখনও বাকি।’ এরপর এই রোড শো শেষ করে জনসভায় অংশ নেন শুভেন্দু। সেখানেও শীতের পরোয়া না করেই বিশাল সংখ্যক দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় জমান। বাড়ি ফেরার সময় দলীয় কর্মীরা অবশ্য রপ্ত করে নিয়েছেন, ভাতিজা ভেট শব্দটিকে। ঘুরে ফিরে সেটাই বলে বলে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা।