সুবর্নরেখার শারদীয়া পরব :অলক্ষ্মী বিদায় ও পৈড়ান পরব। উপেন পাত্র
কয়েক দশক আগেও শারদীয়া কালে সুবর্ণরেখা নদী অববাহিকা অঞ্চলে অলক্ষ্মী বিদায় ও পৈড়ান নামে দু’টি পরব ছিল,যা বর্তমানে লুপ্ত হয়ে গেছে।কালী পুজোর ভোরে হতো অলক্ষ্মী বিদায় ও পরদিন হতো পৈড়ান পরব।কালী পুজোর দিন সন্ধ্যায় গোবর দিয়ে অলক্ষ্মী মূর্তি বানানো হতো।লোক বিশ্বাসে অলক্ষ্মীর সাথী হলো মানুষ,গবাদি পশু ও ফসলের যত অনিষ্টকর পোকামাকড়।তাই অলক্ষ্মীর সাথে তাদেরও পরদিন ভোরবেলায় ভাঙা কুলা ও ভাঙা টিন পিটিয়ে হৈহল্লা করে মৌজার সীমার বাইরে বিসর্জন দেওয়া হতো। পরে এই প্রথা লুপ্ত হয়ে শুধু “মশাখেদা” নামে একটি অনুষ্ঠান হতো,বর্তমানে তাও লুপ্ত হতে চলেছে।
পৈড়ান পরবের সকাল বেলায় পাটের বিনুনি পাকিয়ে প্রতিটি বাড়ির সামনে পোঁতা হতো।একে “পৈড়ান গাড়া” বলা হতো। পরে ঢাক ঢোল বাজিয়ে হৈহল্লা করতে করতে ঘরে ঘরে তা তোলা হতো।ঐসাথে প্রতি বাড়ি থেকে চিড়ে,গুড়,কলা,দুধ, বাতাসা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হতো।দুপুর পর্যন্ত এই পৈড়ান তোলা চলতো।
বিকালে নদীর বালুচরে নানান প্রতিযোগিতার আসর বসতো,পাঞ্জা লড়া,লাঠি খেলা,খালি হাতে কুস্তি,দৌড় ও লম্ফন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি হতো।
খেলাধুলার অন্তে সবাই গ্রামের কোন প্রশস্ত স্থানে গ্রাম দেবতার ভোগ প্রস্তুতির কাজ চলতো।বড় বড় কড়াইতে চিড়ে,গুড়,দুধ কলা ইত্যাদি একসাথে মাখিয়ে প্রথমে গ্রাম দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হতো।তারপর সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করা হতো।