অশ্লেষা চৌধুরী : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপক কর্মী সঙ্কটের মুখে পড়েছে রাজ্যের সর্ব বৃহৎ সংক্রামক রোগের হাসপাতাল বেলেঘাটা আইডি। আইসিএমার এবং নাইসেড লাগোয়া এই হাসপাতালটিতে জরুরি এবং জীবনদায়ী পরিসেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা চূড়ান্ত সঙ্কটের মুখে প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে যখন ৬,৯১০ আক্রান্ত এবং ২৬ জনের মৃত্যুুুর মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। যখন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রুগী উপচে পড়ছে তখনই চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকেল কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। যা রীতিমত আশঙ্কার কারন হিসাবেই মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে রেকর্ড ভেঙে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেলেঘাটা আইডিতে বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে করোনা চিকিৎসায় বেডের সংখ্যা বাড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তা যথেষ্ট নয় এবং স্বাস্থ্য দফতর ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিক্যাল টেকনিশিয়ান প্রয়োজন বলে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি লেখা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাল্টি ডিসিপ্লিনারি চিকিৎসক প্রয়োজন। কার্ডিওলজি, ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট, মেডিসিন, পালমনোলজির মতো ক্ষেত্রে চিকিৎসক চেয়ে চিঠি লিখেছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে এইচডিইউ বিভাগ তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে একাধিক যন্ত্র রয়েছে এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে যাতে তা কাজে লাগানো যায় তাই আরও টেকনিশিয়ান প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকারও। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর যাঁরা ভোটগ্রহণ পর্বের জন্য এ রাজ্যে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকে আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে হবে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনও বাকি ৪ দফা ভোট করাতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাকি সব দফায় ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হবে। পাশাপাশি কাটছাট করা হয়েছে প্রচারের সময়সূচিতেও। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত কোনও প্রচার করা যাবে না বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে। এই নিয়ম চালু হচ্ছে শুক্রবার থেকেই। তারকা প্রার্থী সহ সকল প্রার্থীকেই মাস্ক পড়া ও কোভিড বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যেসব রাজনৈতিক সমাবেশে কোভিড বিধি মানা হচ্ছে না বা কেউ মাস্ক পরছেন না, সেগুলির দিকে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকেই নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি এই সমস্ত বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার, জেলা নির্বাচন আধিকারিককেও নজরদারী চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে কোভিড বিধি শিকেয় তুলে সকল রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার পর্ব চালাচ্ছিলেন, সেকথা মাথায় রেখে মিটিং-মিছিলে রাশ টানার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে ৩ টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। যার একটির রায় মঙ্গলবারই দিয়েছে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সমাবেশে বা যে কোনও জমায়েতে কোভিড গাইডলাইন মানা হচ্ছে কিনা সুনিশ্চিত করতে হবে। একসঙ্গে বেশি ভিড় যাতে না হয়, নজরে রাখতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের মাস্ক পরতে হবে। কর্মীদেরও মাস্ক পরতে জোর দিতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের। আর এই সকল বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে মুখ্য় নির্বাচনী আধিকারিক ও রাজ্যের জেলাশাসকদের। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরেই শুক্রবার তড়িঘড়ি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে কমিশন। তারপরেই জরুরি ভিত্তিতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে কমিশন।