ওয়েব ডেস্ক : করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে বারংবার অভিযোগ উঠেছে রুগী ভর্তি না নেওয়ার। ফলে জীবন সঙ্কট হয়ে উঠছে অনেকের। এবার হাসপাতাল চিকিৎসা না করে ফেরানোয় এক রোগীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল কলকাতাতেই। ছেলের শোকে মৃত্যু হল বাবারও। অভিযোগ পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট, অবশেষে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলেও দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে শেষ অবধি মেলেনি চিকিৎসা।শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন কলকাতার হরিদেবপুরের বাসিন্দা বছর ৫০ এর গোপাল মন্ডল নামে এক প্রৌঢ়।
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৮৭ বছরের বৃদ্ধ বাবার। একইদিনে বাবা-ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। মুখ্যমন্ত্রীর সাধের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বারংবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি গর্ব করেন। কিন্তু আদপে আদেও রোগীরা যে হাসপাতালে পরিষেবা পায় না তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো এই ঘটনা।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছু বছর আগে দুর্ঘটনায় গোপালবাবুর পায়ে চোট লেগেছিল। সেই সময় তার পায়ে প্লেট বসাতে হয়েছিল। এতদিন তিনি ভালোই ছিলেন। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে ফের তার পায়ে ব্যাথা শুরু হয়। একেই লকডাউন তার ওপর করোনা ভয়ে অধিকাংশ চেম্বার বন্ধ থাকায় কোনোরকমে ব্যাথা সহ্য করেই দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু শনিবার রাতে ব্যাথায় কাতরাতে থাকেন গোপালবাবু। অবশেষে তাকে বেহালার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দীর্ঘক্ষণ তাদের বসিয়ে রাখা হয়। সেখানেও ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকেন তিনি। অবশেষে ৫ ঘন্টা বসিয়ে রাখার পর ডাক্তার আসেননি বলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তখনও যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তিনি। বাড়ি এসে আর সহ্য করতে না পেরে যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে পাশের পরিত্যাক্ত একটি ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই প্রৌঢ়। ঘটনাটি পরিবারের সদস্যদের নজরে আসতেই তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা গোপালবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর মৃতদেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
এদিকে ছেলের আত্মহত্যার খবর শোনা মাত্রই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় গোপালবাবুর বাবা ভূতনাথ মণ্ডলের। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে একই পরিবারে পরপর দুজনের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই হতভম্ব হয়ে পড়েছে গোটা মণ্ডল পরিবার। ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন তারা। তাঁদের দাবি, হাসপাতাল থেকে যদি তাদের বিনা চিকিৎসায় ফিরতে না হতো তাহলে হয়তো গোপালবাবুকে ও বাড়ির কর্তাকে এভাবে হারাতে হতো না। এলাকায় জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় শোকের ছায়া।