অশ্লেষা চৌধুরী: বেচারাম ও তাঁর স্ত্রী পাশাপাশি দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী। তৃণমূল কি পারিবারিক সম্পত্তি? পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েই বিস্ফোরক সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই। পাশাপাশি নিজের প্রাক্তন দল তথা শাসক শিবিরের উদ্দেশ্যে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘টিকিট না দেওয়াটা একটা অজুহাত মাত্র। দল তাঁকে বর্জন করেছে। এখন আমার বয়স ৮৯। ৮০ তো দশ বছর আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। এতদিন পর ওদের বোধদয় হল! আমি শয্যাশায়ী নই, অক্ষমও নই। নিয়মিত দলের কর্মসূচীকে অংশ নিয়েছি।‘
৫ই মার্চ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন জায়গায় দিদির সৈনিকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিঙ্গুরের অতি পরিচিত মুখ বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এবারে ৮০ বছরের ঊর্দ্ধে দল কাউকেই টিকিট দেয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেই নিয়মানুযায়ী টিকিট পাননি সিঙ্গুরের এই বর্ষীয়ান নেতা। আর টিকি না পেয়েই ঐদিনেই নিজের ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর পরিবর্তে বেচারাম মান্নাকে প্রার্থী করা হয়েছে। আর শুধু তাঁকেই যে সিঙ্গুর কেন্দ্র থেকে দাঁড় করানো হয়েছে তা নয়, হুগলী জেলারই হরিপাল কেন্দ্র থেকে বেচারাম মান্নার স্ত্রী করবী মান্নাকেও প্রার্থী করা হয়েছে। আর এতে মাস্টারমশাই চটে গিয়ে নেত্রী বললেও বেচারামের হয় ভোটের প্রচার করবেন না বলেই সাফ জানিয়ে দেন।
এরপরেই ক্রমাগত দশ বছর সিঙ্গুরে বিধায়ক থাকা মাস্টারমশাই ক্ষুদ্ধ হয়ে সোমবার নাম লিখিয়েছেন পদ্ম শিবিরে। যদিও বিজেপি থেকে ওনাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হবে কি না তা জানা যায়নি। তবে পদ্ম শিবিরে যোগ দিতেই সদ্য প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, টিকিট না পাওয়ায় বুঝলাম দল পরিত্যাগ করেছে। যদি আমার সঙ্গে আলোচনা, পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে বুঝতাম দল আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু আচমকাই কিছু না জানিয়েই প্রার্থীতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল। রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ এদিন আরও একবার উগরে দিয়ে বলেন, বেচারাম ও তাঁর স্ত্রী পাশাপাশি দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তৃণমূল কি পারিবারিক সম্পত্তি? পাশাপাশি দলের ৮০ বছরের উপরে কাউকে টিকিট না দেওয়ার দলের যুক্তিও মানতে নারাজ তিনি। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ৮০ তো দশ বছর আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। এতদিন পর ওদের বোধদয় হল! আমি শয্যাশায়ী নই, অক্ষমও নই। নিয়মিত দলের কর্মসূচীকে অংশ নিয়েছি।‘
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন রাজ্যে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা করার পর ৫ই মার্চ তৃণমূল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। আর তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শাসক শিবিরে যেন বিদ্রোহের ঝড় উঠেছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলের হয়ে ব্যাট ধরার সুযোগ না পেয়ে অনেকেই কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলেন। কেউ হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। তার মধ্যে কেউ কেউ নিজের সম্মানের দোহাই দিয়ে পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। কোথাও আবার প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে দলের একাংশই। উত্তর থেকে দক্ষিণ বিক্ষুব্ধ হয়ে একে একে দল ত্যাগ করে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিচ্ছেন দিদির বহু সৈনিক। কে নেই সেই তালিকায়- সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য , শিবপুরের জটু লাহিড়ী, সাঁকরাইলের শীতল সর্দারের মতো বর্ষীয়ান রাজনীতিকদের থেকে শুরু করে সোনালী, দিপেন্দু সকলেই রয়েছেন। এমনকি টিকিট না পেয়ে মন্ত্রী পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন রত্না ঘোষ কর। এককথায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে যেন দ্রুত গতিতে ধ্বস নামছে শাসক শিবিরে।
তবে ২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পরিবর্তন আনায় দিদির দুই প্রধান সৈনিক শুভেন্দু ও সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই দুজনেই এখন পদ্ম শিবিরে। সেক্ষেত্রে এবারে বাংলার মসনদ দখলের লড়াইয়ে শাসক শিবিরের জয়ের ক্ষেত্রে তারা কতটা বাধা হয়ে দাঁড়ান বা আদৌ বাধা হতে পারেন কি না, সেটার উত্তর তো আগামী ২রা মে দেবে।