ওয়েব ডেস্ক: তৃণমূল ছেড়েছেন প্রায় বছর দুয়েক আগেই। এরপর বহুদিন কাটিয়েছেন রাজনীতির মূলস্রোত থেকে অনেক দূরে। তৃণমূল ছাড়ার পর বঙ্গ বিজেপিতে নাম লেখাবেন কিনা তা নিয়ে রাজ্যবাসীর জল্পনারও অন্ত ছিল না। শেষমেশ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহের কানন। কিন্তু তারপরও বিজেপির কোনও সভা-সমাবেশ, কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাঁকে। তারওপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে বেরোনো প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন। ফলে বহুদিন তাকে দেখা যায়নি। তবে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চলেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর তা যে বঙ্গ বিজেপির হাত ধরেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সূত্রের খবর, চলতি মাসেই দিল্লিতে হাইকমান্ডের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিতে পারেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। গত মঙ্গলবারই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বিজেপি নেতা মুকুল রায়। ২২ জুলাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠকও শুরু হয়েছে। জানা গিয়ে টানা এক সপ্তাহ কয়েক দফায় চলবে সেই বৈঠক। এমনকি চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে এই বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিও যেতে পারেন শোভনবাবু। সেখানেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সামিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গিয়েছে, বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অরবিন্দ মেননকে শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যেহেতু তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তারওপর দিল্লির করোনা পরিস্থিতি এই মূহুর্তে বেশ ভয়ঙ্কর। ফলে যদি কোনওভাবে তিনি ২৮ জুলাই দিল্লি যেতে না পারেন তবে ভারচুয়ালই তিনি বৈঠকে যোগ দেবেন। এদিকে বিজেপি নেতৃত্ব চাইছে যেভাবেই হোক ২০২১ এর নির্বাচনের আগে শোভনবাবু বঙ্গ রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হোন। তাই দিল্লিতে সশরীরে হাজির থাকতে না পারলেও তিনি যেন অন্তত ভারচুয়াল বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন সেই আবেদন করেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে কালিঘাটের কার্যালয় থেকে যখন দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সময় দিল্লি উড়ে গেলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যে আসতে পারছেন না। কিন্তু বৈঠক জরুরি। রাজ্যের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে প্রদেশ নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতেই দিল্লি যাওয়া।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ এর ১৪ আগস্ট বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে যোগদানের পর রাজ্য বিজেপির তরফে কলকাতায় দু’জনকেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওইদিনই বিজেপির সাথে কোনো বিষয়ে মত পার্থক্য হওয়ায় দল থেকে সরে এসেছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে দলের কোনও কর্মসূচি, সভা-সমাবেশে দেখা যায়নি শোভনবাবুকে। এরপরই দলের অন্দরে শোভন- বৈশাখীর তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শোনা যায়। কিন্তু বরাবরই নীরবতা বজায় রেখেছেন শোভনবাবু। এরমধ্যে গত বছরই সবার জল্পনা উসকে ভাইফোঁটার দিন মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে হাজির হন শোভনবাবু ও বৈশাখীদেবী। ফলে অনেকেই নিশ্চিত হয়ে যান যে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহের কানন ফের ঘাস শিবিরেই ফিরছে। কিন্তু কোথায় কি! ফের দীর্ঘদিন বেপাত্তা হয়ে যায় এক সময়কার কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। এবার তাঁর দিল্লিতে হাইকমান্ডের বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়েও ফের জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে।