নিউজ ডেস্ক: জেলা সফরে এসেই বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল। দেখানো হল কালো পতাকা, তাও দু’ দু বার। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা এলাকায়। তবে দমবার পাত্র নন রাজ্যপালও। আইসিকে চওড়া সুরে ধমক দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, বিক্ষোভের ঘটনা মোতেও ভালোভাবে নেননি তিনি। সেই সঙ্গেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও আবার এক হাত নিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
বৃহস্পতিবার শীতলকুচিতে গুলি কাণ্ডে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যপাল। এই বিষয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তবে সেই আপত্তি উপেক্ষা করেই বিএসএফের চপারে চেপে কোচবিহার সফরে আসেন তিনি। আর সফরে এসেই এদিন কোচবিহারের দিনহাটায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে গোব্যাক স্লোগানের মুখোমুখি হতে হয়। একদল লোক জড়ো হয়ে টানা গোব্যাক স্লোগান তোলে বলে অভিযোগ । সঙ্গে ‘বিজেপির-রাজ্যপাল’ বলেও স্লোগান দেওয়া হয়। যে ঘটনার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকার পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারী কারা ছিলেন জানা না গেলেও এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ সেই এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয়। রাজ্যপালের সঙ্গে থাকা বিজেপির সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও নেমে পড়েন গাড়ি থেকে। পুলিশের উদ্দেশ্যে তাঁকে নির্দেশ দিতেও দেখা যায়, ‘সবকটা অ্যান্টিসোশ্যাল, লাঠিচার্জ করুন।’
কোচবিহারের সফরের মাঝে এদিন এর আগে জোড়পাটকিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছিল। গোলকগঞ্জে তাঁকে দেখানো হয় কালো পতাকা। ঘটনাস্থলে কিছুক্ষণের মধ্যে দিনহাটা থানার আইসি এসে পৌঁছলে তাঁকে ধমকও দেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের কনভয় কোচবিহারের দিকে যাবে বলে তাঁর কাছে খবর ছিল বলে আইসি জানাতেই রাজ্যপালের চড়া ধমক, ‘সব অজুহাত রয়েছে শুধু আইন-শৃঙ্খলা সামলাতে না পারার কোনও অজুহাত নেই।’ যার পরই রাজ্যপাল জোড়েন, ‘স্থানীয় লোকেদের চোখে পুলিশকে নিয়ে ভয় দেখতে পেয়েছি। তাদের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে। মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা জিনিসপত্র লুট হয়েছে।’
পাশাপাশি কোচবিহারে পৌঁছেই বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন রাজ্যপাল। তিনি দাবী করেন, চিঠি দিয়ে তাঁর সাংবিধানিক পদকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন হেলিকপ্টারে করে কোচবিহারে পৌঁছন জগদীপ ধনখড়। নেমেই প্রথমে চড়া সুরে আক্রমণ শানান রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে বলেছেন, প্রশাসনিক নির্দেশে রাজ্যপাল সরকারের মুঠোয় চলে আসবে।’রাজ্যপালের প্রশ্ন, ‘সাংবিধানিক পদকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী?’ তাঁর মতে, এভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে হিংসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিকেই দায়ী করেন ধনখড়। বলেন, ‘বাংলা ছাড়াও ৪ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, কোথাও রক্তপাত হয়নি। প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরেই হিংসা হয়েছে রাজ্যে।’
রাজ্যপাল আরও বলেন, “বাংলার রক্ত রঞ্জিত সময়ে এখন প্রয়োজন সৌভ্রাতৃত্বের; রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে, রাজ্যপাল ও সরকারের মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, এর জন্য যাতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। প্রশাসনিক আধিকারিকদের হাতের মুঠোয় না রেখে তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হোক, এটাই এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সঠিক রাস্তা।”
শীতলকুচি প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাজ্যপাল বলেন, “কোচবিহারের সেই ঘটনা হতেই মুখ্যমন্ত্রী বলে দিলেন নরসংহার, ঠাণ্ডা মাথায় খুন। অথচ এখানকার বিভিন্ন প্রান্তে অন্য ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যা করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে দেশ দুনিয়ায় যারা বাংলা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন, তাঁদের অনুরোধে সিধান্ত নিয়েছি আমি যাবো। সংবিধান বাঁচাতে, রাজ্যপাল হিসেবে দেশকে বাঁচাতে যত বাধাই আসুক না কেন, তাতে আমি প্রভাবিত হব না।”পাশাপাশি রাজ্যপাল বলেন, “ কিছু লোকের সাহস কি করে হয় আইন হাতে তুলে নেওয়ার? মুখ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেরকম সদর্থক কোন ভূমিকা গ্রহণ আমার চোখে পড়েনি।”
রাজ্য ও রাজ্যপাল সংঘাত নতুন কোনও বিষয় নয়; সম্পর্কটা বরাবরই দাউ-মাছের। আর তার প্রমাণ রাজ্যপালের জেলা সফর ঘিরে আবার স্পষ্ট হল এদিন।