Homeএখন খবরহাল খারাপ খড়গপুরেরই, অ্যান্টিবডি টেস্টে তাই স্বাস্থ্য দপ্তরের জোর পাঁচবেড়িয়া সহ ৭...

হাল খারাপ খড়গপুরেরই, অ্যান্টিবডি টেস্টে তাই স্বাস্থ্য দপ্তরের জোর পাঁচবেড়িয়া সহ ৭ ওয়ার্ডে

মেদিনীপুর:- খড়গপুর মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশ খড়গপুর শহরের জন্য পূর্ন লকডাউন চাইছেন। ৫ লাখি শহরকে পুরোপুরি তালা বন্ধ করতে না পারলে করোনা সংক্রমন  ঠেকানো অসম্ভব এমনটাই মনে করছেন পুলিশ এবং প্রশাসকরা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিও আকর্ষন করেছেন তারা, সে সুপারিশ আপাতত বিবেচনাধীন। এবার সেই ভাবনা কতটাই যুক্তি যুক্ত তা বোঝা গেল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের ভাবনা তেও। জেলায় সংক্রমনের হার ও গতি প্রকৃতি কী রকম তা বোঝার জন্য জেলা ব্যাপী বিশেষ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে তার প্রায় চার ভাগের এক ভাগই বরাদ্দ করা হয়েছে শুধু খড়গপুর শহরের জন্য। জানা গেছে জেলা জুড়ে কী হারে সংক্রমন ছড়াচ্ছে তা বোঝার জন্য সারা জেলায় মোট ৩০টি ক্লাষ্টার বা ক্ষেত্র বেছে নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে খড়গপুর শহরেরই ৭টি ওয়ার্ড রয়েছে।

“এই সার্ভে যাকে ‘সেরো সার্ভেলেন্স’ বলা হচ্ছে তার উদ্দেশ্য হল নজরদারি। আমরা পুলিশের সাইবার ক্রাইম দপ্তরে আজকাল এই সার্ভেলেন্স শব্দটার ব্যবহার পাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে কী ধরনের অপরাধ ভেতরে ভেতরে ছড়ানো হচ্ছে তার ওপর সার্ভেলেন্স বা নজরদারি করা। সেরোলোজিক্যাল সার্ভেলেন্স বা সেরো সার্ভেলেন্স হল মানব শরীরের রক্তের বিভিন্ন উপাদান বিচার করে ব্যক্তির ওপর এবং ওই এলাকার কোনও একটি ভাইরাসের প্রভাব, সংক্রমনের হার, শরীরের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ ক্ষমতা, উপসর্গহীন অথচ আক্রান্ত ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি চালানোর পদ্ধতি যার ফলাফল থেকে আমরা অতি মারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল খুঁজে বের করতে পারি।” জানালেন এক স্বাস্থ্য কর্তা।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব বলছে মঙ্গলবার জেলায় এখনো অবধি পর্যন্ত মোট ৬৭১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ যার মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪০৪ জন ৷ মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের ৷ স্বাস্থ্য দপ্তরেরই হিসেব অনুযায়ী জেলাতে মোট ২৩১ টি গ্রাম ও পৌর ওয়ার্ডে করোনার সংক্রমন দেখা দিয়েছে ৷ ওই ২৩১ টির মধ্যে ৩০ টি এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই সার্ভের জন্য। আর এই ৩০টির মধ্যে খড়গপুর শহরেরই ৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে যুক্ত পড়ুয়াদের নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেল এই অ্যান্টিবডি পর্যবেক্ষনের সেরো সার্ভেলেন্স সমীক্ষা পদ্ধতির।

মেদিনীপুর মেডিক্যালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান পার্থসারথি শতপথী বলেন, ‘‘আমরা ৩০টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছি যেখানে আমরা এই স্টাডি করব।খালি চোখে যাঁকে সুস্থ দেখাচ্ছে, তিনি সত্যিই সুস্থ, না কি সংক্রমিত, এই টেস্টের ফলে তা বোঝা যাবে। যদি দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তার মানে তিনিও সংক্রমিত। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংক্রমণ কোন স্তরে রয়েছে তা-ও বোঝা যাবে। যিনি পজিটিভ হয়েছিলেন, তাঁর অ্যান্টিবডি লেভেল কত, ওই লেভেল কতদিন থাকছে, তিনি কতদিন সংক্রমণকে রোধ করতে পারবেন, এ সবেরও আন্দাজ পাওয়া যাবে। ”

জেলার উপমুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্য শঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, জেলাতে যেখানে সংক্রামক রোগী পাওয়া গিয়েছে তার পাশপাশি মানুষের কি অবস্থা, কতখানি উপসর্গহীন সাধারন সংক্রামিত বা তাদের শরীর কিভাবে লড়াই করছে তা বোঝা যাবে । তাছাড়া যারা সংক্রামিত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের শরীরের কি বর্তমান অবস্থা তাও দেখবো । এটার দ্বারা রোগপ্রতিরোধী অবস্থান জেলার জানতে পারবো ভবিষ্যতের জন্য”

স্বাভাবিক ভাবে এই ৩০টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করার সময় সর্বাধিক সংক্রমিত এবং উপদ্রুত জায়গা গুলিকেই বেছে নিয়েছে যার মধ্যে সর্বাধিক ৭টি ক্লাস্টার খড়গপুর পৌর এলাকায়, ৬ টি ক্লাস্টার নিয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক দাসপুর ২ ব্লক এবং ৫টি ক্লাস্টার নিয়ে দাসপুর ১ ব্লক রয়েছে।
অথচ করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় ওই দুটি ব্লকের প্রতিটি ব্লকই আক্রান্তের সংখ্যায় ১০০ ছাড়িয়েছে যেখানে খড়গপুর শহরে আক্রান্ত ওই দুই এলাকার চাইতে অনেক কম, মাত্র ৪০ ছুঁয়ে। আবার মৃত্যূর দিক থেকে দেখতে গেলে শহরে মৃত্যুর পরিমান বেশি। সারা জেলার ১৬টি মৃত্যুর ৬টি এই শহর থেকে ই হয়েছে।

খড়গপুর পৌর এলাকার যে ৭ টি ওয়ার্ডকে এই সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে সেগুলি হল ৪ নম্বর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড পাঁচবেড়িয়া এলাকা, ১০ নম্বর ওয়ার্ড ওল্ড মালঞ্চ এলাকা, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড খরিদা এলাকা ,২২ নম্বর ওয়ার্ড বাস স্ট্যান্ড সহ আজাদ বস্তি এলাকা ,২৬ নম্বর সাউথ সাইড (আর পি এফ ব্যারাক) এলাকা ,২৭ নম্বর ওয়ার্ড রেল হাস পাতাল সংলগ্ন এলাকা। বলাবাহুল্য এই এলাকা গুলিই খড়গপুর শহরের সর্বাধিক সংক্রমিত ও কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় রয়েছে

RELATED ARTICLES

Most Popular