নিজস্ব সংবাদদাতা: পুরো খড়গপুরকেই কার্যত কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দিলেন খড়গপুর পৌরসভার বিদায়ী উপ পৌর প্রধান সেক হানিফ। মঙ্গলবার রাতে তাঁর করোনা পজিটিভ আসার পরই চলে গেলেন খড়গপুরের শীর্ষ পদাধিকারীরা। এখনও অবধি প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিক, পুলিশের সর্বোচ্চ আধিকারিক, মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে শুরু করে ২ ডজনেরও বেশি কর্মকর্তা চলে গিয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। এখনও কতজনকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। একসঙ্গে এতজন পদাধিকারী ও জনপ্রতিনিধিরা কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা খড়গপুর জুড়েই। কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়া এই ব্যক্তিরা কোথায় কখন কার কার সঙ্গে মিশেছেন, কার সঙ্গে মিটিং করেছে তারই হিসাব নিকেশ নিয়ে এখন ব্যস্ত জনতা।
এখনও অবধি পাওয়া সূত্র অনুযায়ী খড়গপুরের মহকুমা শাসক বৈভব চৌধুরী, খড়গপুরের দায়িত্ব প্রাপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ, খড়গপুরের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল, খড়গপুর শহরের বিধায়ক তথা বিদায়ী পৌর প্রধান প্রদীপ সরকার এবং ২৫ জনের কাছাকছি বিদায়ী কাউন্সিলর কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। কোভিড-১৯ য়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বর্তমানে খড়গপুর কার্যত অভিভাবক হীন।
আরও মারাত্মক খবর যে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ইতিমধ্যেই গলা ব্যথা জাতীয় কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। যা এই সময়ের ঋতু পরিবর্তন জনিত সমস্যা নাকি করোনারই উপসর্গ তা নিয়ে রয়েছে দারুন সংশয়। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবারই তাঁর নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া প্রত্যেক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধির নমুনা পরীক্ষা করা হবে রবিবার কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কিছু উপসর্গ দেখা দেওয়ায় বৃহস্পতিবারই তাঁর নমুনা পরীক্ষা করা হবে। যদি আশঙ্কা সত্যি বলে প্রমানিত হয় তবে দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করা যাবে।”
এদিকে এই অবাঞ্ছিত ঘটনার জন্য সেক হানিফকেই দায়ী করেছেন অধিকাংশ প্রশাসক ও জন প্রতিনিধি। তিনি বসবাস করেন ৪নম্বর ওয়ার্ডে যেখানে সংক্রমন ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। এরপরেও তিনি গায়ে জ্বর থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। ৬ সদস্যের খড়গপুর পৌর প্রশাসকের এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ” বারংবার ওনাকে সতর্ক করা হয়েছে কিন্তু উনি কারও কথা শোনেননা। এখন নিজে ডুবে গোটা খড়গপুরকে ডোবালেন কারন একসঙ্গে একজন কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ায় খড়গপুর শহরে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেকটাই বাধাপ্রাপ্ত হল। হানিফ একাধিকক্রমে অনেক গুলি সভা করেছেন, রক্তদান শিবিরে উপস্থিত থেকেছেন। এখন এমন অবস্থা যে কে কে করোনা আক্রান্ত হয়ে বসে আছেন বোঝা মুশকিল।”
বুধবার কার্যত গোটা পাঁচবেড়িয়া অঞ্চলকেই কন্টেনমেন্ট জোন করে দিয়েছে পুলিশ। এই এলাকা থেকেই এখনও অবধি ৬ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে যা খড়গপুর শহরে প্রাপ্ত করোনা আক্রান্তের প্রতি চারজনে একজন। এই এলাকাতেই করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২জনের অর্থাৎ শহরের মোট মৃত্যুর ৫০%। রবিবার এখান থেকেই ৫৫জনের লালারস সংগ্ৰহ করা হয় যারমধ্যে সেক হানিফ সহ ৩ জনের পজিটিভ ধরা পড়ে। এক স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, “আক্রান্তের পরিমান ৬% যা গোষ্টি সন্ক্রমনের লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয়। দুটি ওয়ার্ড সহ পাঁচবেড়িয়ার জন সংখ্যা ১৫হাজার আর যদি আক্রান্তের ওই হার বজায় থাকে তবে বলতে হয় ওই এলাকায় ৯০০ থেকে ১০০০ জন আক্রান্ত।”
খড়গপুর পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন,”হানিফের এই অবিবেচনা প্রসূতকাজ প্রথম নয়। খবর নিয়ে দেখুন ওনার এলাকায় লকডাউন মানা হয়নি, ঠিক মতন। আজ তার মাশুল গুনছে গোটা খড়গপুর। মাস দুয়েক আগেও তাঁকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলেও তিনি তা মানেননি। ওনার বিরুদ্ধে মহামারী আইনে মামলা করা উচিত ছিল অনেক আগেই।”বুধবার সকালেই হানিফ সহ তিনজনকে কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হানিফের পরিবার সহ লালারস সংগ্ৰহ করা হয়েছে আরো ৪জনের।