নিজস্ব সংবাদদাতা: মঙ্গলবারবার মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ লক্ষীকান্ত ঘোষের। এদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ভাদুতলা থেকে লালগড় যাওয়ার রাজ্য সড়কের ওপর তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় পথিমধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। ষাট লাগোয়া লক্ষীকান্ত ঘোষ চলতি পঞ্চায়েত সমিতিতেই কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন বলেই জানিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির অপর এক কর্মাধ্যক্ষ তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যুব তৃনমূল নেতা সন্দীপ সিংহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মঙ্গলবার শালবনীর জলহরি গ্রাম থেকে নিজের গ্রাম জাড়া তে ফিরছিলেন ঘোষ। দুটি জায়গাই রাজ্যসড়কের ওপর ৩কিলোমিটার দূরত্বে। নিজের বাইক চালিয়েই যাতায়াত করেন সর্বত্রই। সেই মতই ফিরছিলেন। এরপর খোঁজ মেলেনি তাঁর। কিছুক্ষণ বাদে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীরা তাঁকে বাইক সহ পড়ে থাকতে দেখেন। এলাকায় জনপ্রিয় নেতৃত্ব হওয়ার সুবাদে তাঁকে তৎক্ষণাৎই চিনতে পারেন পথচারীরা এবং খবর দেন জাড়াতে। খবর পাওয়া মাত্রই তৃনমূলের দলীয় নেতৃত্ব, পরিজন ও পুলিশ মিলে দ্রুত তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই স্ক্যান হয় তাঁর। দেখা যায় মস্তিষ্কের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন জটিল অস্ত্রোপচার জন্য তাঁকে উন্নততর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। এরপরই তাঁকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন সঙ্গীরা কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। মরদেহ ফিরিয়ে আনা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই ময়নাতদন্তের পর দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।
শালবনীর তৃনমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, শালবনী ব্লকের দলীয় সহসভাপতি ছাড়াও ঘোষ একজন সমাজসেবী হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। এলাকায় প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া জাড়া মিরগা কৃষি উন্নয়ন সমিতিকে পুনর্জীবিত করেন বছর তিনেক আগে। কৃষি সমবায় আন্দোলনের এই কার্যকরী ভূমিকায় উপকৃত হয়েছেন গড়মাল গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার শত শত কৃষক। নিজে সম্পাদক হওয়ার সুবাদে ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায়ে তিনি যে সুসংহত উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারই ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ওই সমবায় সমিতি।
কী কারণে এই দুর্ঘটনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্যদিকে বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবেই কী মাথায় চোট পেয়ে মারা গেছেন তিনি নাকি অন্যকারণে মৃত্যু তাও জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর। “একটা ঘটনা পরিস্কার যে ঘোষ হেলমেট ব্যবহার করেননি। হয়ত মাত্র কিছুটা দূরত্বে যাবেন বলেই হেলমেট পরেননি তিনি। যদি হেলমেট হীনতাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয় তবে বলতেই হবে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে তাঁকে। সামান্য দূরত্বযে মারাত্মক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণ হতে পারে এটা আমাদের সবারই বোঝার দরকার বিশেষ করে যাঁরা হেলমেট না পরার জন্য নানা অজুহাত খাড়া করে থাকেন।” জানালেন শালবনীর এক তৃনমূল নেতা।
তবে চিকিৎসকরা আরও একটি সম্ভবনার কথা বলছেন সেটা হল বাইক চালাতে চলতেই উচ্চরক্তচাপে তাঁর স্ট্রোক হয়ে গেছিল কীনা! হয়ত সেই স্ট্রোক হওয়ার কারনেই তিনি বাইক সমেত পড়ে যান। এটা ময়নাতদন্তের পরেই পরিষ্কার হবে। এক্ষেত্রেও চিকিৎসকদের পরামর্শ ৫০ উর্দ্ধে যাঁরা বাইক চালান তাঁদের ব্লাডপ্রেসার থাকলে সবসময় যে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার পরই বাইক ব্যবহার করা উচিৎ।