নিজস্ব সংবাদদাতা: বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দড় বেশি এ প্রবাদ যেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্যই তৈরি হয়েছিল।সিভিকরা শুরুতে নামের পাশে পুলিশ কথাটা লিখত কিন্ত মমতা ব্যানার্জী লক্ষ্য করলেন এতে নিজেদেরকে পুলিশই ভাবতে শুরু করেছে পাঁচ হাজারি দলটি। তারপর পুলিশ তকমা কেড়ে নিয়ে দেওয়া হল ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক নাম কিন্তু ভেতরের পুলিশ পুলিশ ভাবটা তাতে বদলায়নি। ধরে আনতে বললে বেঁধে আনা আর বেঁধে আনতে বললে তো কথাই নেই।নির্বাচন কমিশন থেকে শীর্ষ আদালত পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন সিভিকদের কাজ। রাস্তায় ভিড় সামলানো, যানজট নিয়ন্ত্রন করা কিন্তু সিভিক পুলিশ হবেই আর কোথাও কোথাও পুলিশের চেয়ে বড় হতে চায়। শাসকদলের কিছু নেতার বদান্যতায় পুলিশ সেজেও থাকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার অন্তর্গত ভেমুয়া গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার সিভিকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই অভিযোগই ফের প্রমানিত হল শুক্রবার।
ভেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আমদা গ্রামে এক যুবককে বেধড়ক মারের অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে গ্রামবাসীরা। দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে ওই সিভিককে। ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে এক স্থানীয় তৃনমূল নেতাকে পাঠিয়ে ঘটনা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় পুলিশকে ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার করতে হয়। যদিও তার আগেই ওই সিভিককে দিয়ে তার দুষ্কর্মের জন্য একটি মুচলেকা লিখিয়ে নেন গ্রামবাসীরা।
আমদার গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় নারায়ন ভক্তার বাড়িতে একটি পারিবারিক কলহ চলছিল। পারিবারিক বিষয়ে নিজেদের মধ্যেই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে ভক্তা পরিবার যার মধ্যে নারায়ন ভক্তার ছেলে পিন্টু ভক্তাও জড়িত হয়ে পড়ে। এই বিতণ্ডা চলাকালীন সেখানে হাজির হয় সিভিক ভলান্টিয়ার বিশ্বজিৎ সাবুদ। সে কৈফেয়ৎ দাবি করে কেন তারা ঝগড়া করছে। পিন্টু জানায় এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার এখানে সিভিক কেন নাক গলাবে? অভিযোগ এরপরই পিন্টুর ওপর চড়াও হয় বিশ্বজিৎ। তাকে লাথি ঘুষি চালাতে থাকে। মারের চোটে পড়ে যায় পিন্টু। তা দেখে ভক্তা পরিবার চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসীরা ছুটে আসে। বিশ্বজিৎকে ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ।
খবর যায় সবং থানায়। এমনিতেই লকডাউন আর ত্রাণের কাজ সামলাতে পুলিশের ওপর সমস্ত চাপ যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ডিউটি করতে করতে পুলিশকর্মীরা নাজেহাল। নতুন করে আইন শৃংখলা সামাল দেওয়া পুলিশের কাছে সমস্যার। পুলিশের তরফে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে বলা হয় বিষয়টি দেখার জন্য কিন্তু ওই সিভিকের ওপর জনতা আগে থেকেই এতটাই ক্ষুব্ধ যে ওই নেতার কথা মানতেই চায়নি জনতা। নেতা যাওয়ার আগেই সিভিককে দিয়ে একটি মুচলেকা লিখিয়ে নেয় নিজের দোষ কবুল করিয়ে।
এরপর পুলিশ গিয়ে জনতাকে শান্ত করে উদ্ধার করে বিশ্বজিৎকে। পুলিশের উদ্যোগেই পিন্টুর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে জানিয়ে দেয় ভেমুয়া এলাকায় যে তিনজন সিভিক রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই দাদাগিরি আর অত্যাচার মানুষের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। পুলিশ যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয় তাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়বে। উপস্থিত পুলিশ আধিকারিক ক্ষুব্ধ জনতাকে কথা দিয়ে গেছেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হবে বলে দাবি গ্রামবাসীদের।