নিজস্ব সংবাদদাতা: গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে তালা লাগিয়ে বসে আছেন খোদ প্রধান আর উপপ্রধান! পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা তাঁদেরই করার কথা কিন্তু তাঁদের তালিকা করার আগেই তালিকা তৈরি করে ফেলেছে বিডিও অফিস আর যাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাদের আশি শতাংশই পরিযায়ী শ্রমিক নন! রেশন তালিকায় নাম রয়েছে স্থানীয় পান দোকানির, ব্যবসায়ীর। পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে গৃহবধূরও নাম। আর সেই তালিকা দেখার পরই তৃনমূলের প্রধান আর উপপ্রধান তৃনমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে তালা লাগিয়ে বসে আছেন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা অবধি। পঞ্চায়েতের সরকারি কর্মীদের বলেছেন, অন্য অফিস খুঁজে নিতে যেখানে বসে নির্বাচিত পঞ্চায়েতদের বাদ দিয়ে পঞ্চায়েত অফিসের কাজ কর্ম করা যায়। এমনই অবাক করা কান্ড যেখানে ঘটেছে সেই সবংয়ে যেখানে গত দু’দিন ধরে চলছে রেশন বিক্ষোভ।
সবং তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এই প্রবাহমান বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল বুধবারও। যে ঘটনার স্বাক্ষী সবং পঞ্চায়েত সমিতির চাউলকুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতও যেখানে বুধবার রেশন দোকানে বিক্ষোভ দেখিয়ে রেশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিজেপির পাশাপাশি এখানে খোদ তৃনমূল নেতৃত্ব অভিযোগ তুলেছেন গ্রামপঞ্চায়েতের তৈরি করা তালিকাকে সরিয়ে দিয়ে ইচ্ছামত তালিকা তৈরি করা হয়েছে ব্লক অফিসেই। বৃহস্পতিবার সেই চাউলকুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান পরিযায়ীরা। তাঁদেরও অভিযোগ পরিযায়ীদের বাদ দিয়ে তালিকা বাদ দিয়ে রেশন দেওয়া হচ্ছে পরিযায়ী নন এমন মানুষদের।
নওগা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তপন দাস জানিয়েছেন, “১১জুন বিডিও আমাদের জানান পরিযায়ীদের তালিকা তৈরি করতে। আমরা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের সাহায্য নিয়ে ৩৮১ জনের তালিকা তৈরি করি। সিভিকরা যেহেতু কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা পরিযায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তাই ওদের সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু বিডিও তার আগেই ৪১১জনের মত মানুষকে কুপন ইস্যু করে দেন। মজার ব্যাপার সেই কুপন পেয়েছেন চা-পানের দোকানদার থেকে ব্যবসায়ীরা। কুপন পেয়েছেন গৃহবধূও? অথচ আমাদের গ্রামে কোনও গৃহবধূ পরিযায়ী শ্রমিক নন। এদিকে পরিযায়ী শ্রমিকরা এলাকায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে। তারা এই পরিস্থিতিতে আমাদেরই দায়ী করছেন। বাধ্য হয়েই আমরা পঞ্চায়েত অফিসে তালা দিয়েছিলাম। বেলা ২টার সময় বিডিও আমাদের আশ্বস্ত করেন যে, পরের বার এই ভুল শুধরে নেওয়া হবে তারপর তালা খুলে দেওয়া হয়।”
বিডিও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তালিকা আসতে দেরি হওয়ায় মানুষের আবেদনের ভিত্তিতে তাড়াহুড়ো করে তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে যা প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে শুধরে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পঞ্চায়েত দপ্তরের বক্তব্য, জেলায় ৬৩হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকা রয়েছে আর কুপন এসেছে দেড় লাখ। উদ্বৃত্ত কুপন গরিব মানুষদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিক নন এমন মানুষও কুপন পেয়েছে আর তা দেখেই হয়ত কোথাও কোথাও ক্ষোভ হয়েছে কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকরা কুপন পাননি এমন ঘটনা দপ্তরের নজরে নেই তবে এক দু ক্ষেত্রে ভুল হয়ে থাকতে পারে যা শুধরে নিতে বলা হয়েছে।