✍️কলমে: অশোক কুমার আচার্য্য
পণপ্রথা
পণপ্রথা একপ্রকার সামাজিক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধি নির্মূল করতে পারে একমাত্র মেয়েরা বা নারী সমাজ। প্রাচীন কাল থেকে বিবাহ রীতিনীতি বা প্রটোকল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে রাজারাজড়ারা বিবাহ করতেন সন্ধি এবং সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়ানোর জন্য। এইজন্য এক-একজন রাজা ও সম্রাট একাধিক বিবাহ করে অন্তঃপুর ভরিয়েছিল। সেই সব রাণীদের অনেকের যৌবন কেটেছে অনাঘ্রাতা অবস্থায়।
কুলিনদের বিবাহও ছিল অর্থ সংগ্রহের জন্য। তারা বিবাহের তালিকা তৈরি করে নিজের কাছে রাখতো।সময় সুযোগ করে এক এক শ্বশুরালয়ে গিয়ে টাকার বিনিময়ে স্ত্রী সম্ভোগ করতো। লেনদেনের উপর নির্ভর করতো স্ত্রী সঙ্গের দিনের হিসেব। যার ফলে যৌবনের উন্মাদনা মিটতো পরপুরুষ সঙ্গ করে। লোকজন জানতো আবার তারাই সুযোগের জন্য অপেক্ষায় ছটপট করতো। কিছুটা ব্ল্যাকমেইল করার মতো কিম্বা গাজোয়ারি করতো।
আমরা দেখতে পাই বিধবা বিবাহ দেওয়ার সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় কন্যাকে স্বর্ণলংকারে সাজিয়ে পাত্রস্থ করছেন। এইজন্য তাঁকে নিজের টাকা ছাড়াও ধারদেনা করতে হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায় মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে লড়াই করেছেন। নারী শিক্ষা নিয়ে সরব হয়েছেন। এঁরা কেউই পণপ্রথা নিয়ে কোনো আন্দোলন করেননি। স্বামী বিবেকানন্দ একটা কথা সুন্দর বলেছেন – নারীর কীসে ভালো হবে সেটা তাকেই ঠিক করতে হবে। আমাদের কাজ তাকে শিক্ষা দিয়ে বড় করা।
আমরা একটা জিনিস দেখি নারী নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত থাকে মেয়েরা। শাশুড়ি- ননদ -জা, এরা সবাইতো নারী। এরা যদি একজন বধূকে সমর্থন না করে তাহলে বধূনির্যাতন উঠবে কি করে? এখানেই বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গির সার্থকতা। নারীদের ভালো নারীকেই বুঝতে হবে। তা না হয়ে তারাই নির্যাতন করছে। এ এক ভয়ানক মানসিকতা।
আমার নিজস্ব মতামত এটাই, বিবাহের সময় কন্যা- কে সদম্ভে বলতে হবে পণ দেওয়া -নেওয়া হলে আমি বিয়ে করবো না। সারা জীবন অনূঢ়া থাকবো। তবেই এই দূষিত সামাজিক কুপ্রথার বিলুপ্তি সম্ভব।