✒️কলমে: সন্দীপ কাঞ্জীলাল
————-++++++————————
১৮৯৬সালে প্লেগ বোম্বাইতে মহামারি আকার ধারণ করে।১৮৯৮সালে কলকাতায় প্লেগ মহামারীর বিভীষিকাময় রুপ দেখে।কলকাতায় প্লেগের আশঙ্কা স্বামীজির মনে আগে থেকে জেগে ছিল। তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ও ছিলেন। ঐ বৎসর ২৯শে এপ্রিল স্বামীজি ম্যাকলাউডকে চিঠিতে জানান,”আমি যে শহরে জন্মেছি,সেখানে যদি প্লেগ এসে পড়ে, তবে আমি তার প্রতিকারকল্পে আত্মোৎসর্গ করবো বলেই স্থির করেছি।৩রা মে স্বামীজি দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফেরেন।শহরে তখন এমনই আতঙ্কের অবস্থা যে, শিয়ালদা থেকে বাগবাজার আসতে ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া ৬টাকা।বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ প্লেগ মহামারীর রুপকে মা কালীর অপর রুপ বলে মনে করতেন। তিনি বলেন,”কে বলিতে পারে যে,ভগবান শুভের ন্যায় অশুভ রুপেও আত্মপ্রকাশ করেন না।”
এই প্রকাশ আমরা দেখতে পাই রবীন্দ্রনাথের কথায়।তিনি মনে করেন,ভালো মন্দ যাই হোক তাকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে।কারণ সবকিছুই ঈশ্বরের সৃষ্টি। তাহার শুধু সুখ লইবো দুঃখ লইব না তা হতে পারে না।তাই তিনি বলেন,মনেরে আজ কহো যে,ভালোমন্দ যাহাই আসুক,সত্যেরে লও সহজে।”ঈশ্বরের মধ্যে যেমন পূর্ণতা আছে,আমাদের মধ্যে তেমনি পূর্ণতার মূল্য আছে।,তই দুঃখ, সেই দুঃখই সাধনা আমাদের তপস্যা, সেই দুঃখের পরিণাম আনন্দ, মুক্তি, ঈশ্বর। তাই তিনি বলেন,”আমাদের পক্ষ হইতে ঈশ্বরকে যদি কিছু দিতে হয়ে তবে কী দিব, কী দিতে পারি?তাঁহারই ধন তাহাকে দিয়া তো তৃপ্তি নাই–আমাদের একটিমাত্র যে আপনার ধন দুঃখধন আছে তাহাই তাহাকে সমর্পণ করিতে হয়।”
ঈশ্বর কখনো মুক্ত নয়।তিনি নিজেকে আমাদের সঙ্গে বেঁধেছেন। না যদি বাঁধতেন তাহলে কোনো সৃষ্টি হতো না এবং সৃষ্টির মধ্যে কোনো নিয়ম থাকতো না।যে রুপেই তার প্রকাশ হোক তা ঈশ্বরের রুপ।তাই রবীন্দ্রনাথ বলেন, “পৃথিবীতে আমাদের ভাগে যে সুখ পড়ে তাও কি একেবারে ঠিক হিসাবমতো পড়ে?অনেক সময় গাঁটের থেকে যে দাম দিয়েছি তার চেয়ে বেশি খরিদ করে ফেলিনে?কিন্তু কখনো তো মনে করিনে আমি তার অযোগ্য।……… দুঃখের বেলাতে কেবল ন্যায় অন্যায়ের হিসাব মেলাতে হবে?”
তাই এই দুঃখ এবং আঘাত তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা যা করে থাকি তা মিথ্যা চেষ্টা। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেন,”বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা বিপদে আমি না যেন করি ভয়,”।
বিবেকানন্দ বললেন,”শ্রেয়াংসি বহুবিঘ্নানি”
————————————————–