✒️কলমে: নীলাদ্রি শেখর সরকার
—————————————————–
প্রাণ
পূলকের মনটা ভালো যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে রেডিও শোনা হচ্ছে না। রেডিও টা খারাপ হয়ে গেছে। তাতে যেন ওর প্রাণ – টাই খারাপ হয়ে গেছে।
অথচ একটা মিস্ত্রি পাচ্ছে না। এই শহরে যে সব রেডিওর দোকান ছিল
সেসব হয় মোবাইলের দোকান, নয়
চা এর দোকান হয়ে গেছে।
গতকাল বাসে আসতে আসতে একটা বন্ধ দোকানে দেখেছিল লেখা আছে — রেডিও ফ্র করা হয়। দেখে আশ্বস্ত হয়েছিল।
পরদিন দশটা বাজতেই রেডিওটা নিয়ে হাজির হয়ে ছিল জজকোর্টের মোড়ে। গিয়ে দেখে দোকানটা বন্ধ। এই খুলবে এই খুলবে করে দু ঘন্টা কেটে গেল। দোকান খুলল না। পাশের দোকানদার বলল, এ দোকান তো খুলছে না কদিন ধরে।
পুলক এত দুঃখ পেল যে তার নামটার প্রতি তার ঘেন্না ধরে গেল। অবসাদ গ্রাস করল তাকে। সে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে উপস্থিত হলো খোড়ে নদীর ঘাটে। ভাবল যেমন করে সরস্বতী ঠাকুর বিসর্জন দেয়, তেমন করে বিসর্জন দিয়ে দেবে রেডিওটাকে।
কিন্তু দেওয়া হলো না। তাকে বাধা দিল ঘাটে বসে থাকা একটা বুড়ো মতো লোক। শুধু বাধা দিল না, সব শুনে রেডিওটাকে সরিয়ে দিল দুটো তার জুড়ে।
পুলক আবার নামের মহিমা ফিরে পেল। কথাবার্তায় জানতে পারল। এই লোকটাই ওই রেডিও সরানোর দোকানের মালিক। মালিক কিন্তু দীর্ঘ দিন কোনো মাল কামাই হচ্ছে না তার। কোনো খদ্দের নেই।
এই নিয়ে ছেলে বৌমার এত তাড়না যে সে এসেছিল আজ প্রাণ টাই বিসর্জন দিতে। কিন্তু দেওয়া হলো না। একটা প্রাণ বাঁচিয়ে তার নিজের প্রাণের মোহ ফিরে এলো। বলল, “রেডিওটা একটু চালাও তো হে, একটু গান শুনি।”