✍️কলমে: আশিস মিশ্র
(পর্ব–১৬)
এখন সকলেই কবি। কারণ ফেসবুকের দৌলতে কবি হতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। জগঘন্ট একটা কিছু লিখে ফেবুতে পোস্ট করে দিলেই বন্ধুরা তাতে লেবু মাখিয়ে দেবেই। তাই ফেবুকবির সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মাঝে শেয়ার মার্কেট পড়ে যায়, আবার ওঠে। কিছু কিছু ফেবুকবির মার্কেট কখনো টাল খায় না। তাদের পতন নেই। ফলে তাঁরা দল ভারী করে সদর্পে লিখে চলেছেন। তাঁদের কপালে মাঝে মাঝে কচুপোড়া পুরস্কারও জুটে যায়।
এই সব যখন লিখতে বসলাম,তখন এক বন্ধুর ফোন এলো। দাদা একটি কবিতা পাঠিয়েছি, দেখে নেবেন। একটু দীর্ঘ।
আমি জানতে চাইলাম, কী বিষয় নিয়ে লিখেছো? পেরেম না পেরেক?
সে হেসে বললো, না দাদা। একটা দারুণ বিষয়। এর আগে তা নিয়ে কখনো লেখা হয়নি।
আমি বললাম, কী,একটু শোনাবে?
সে বললো, একটি এঁড়ে গরু দু’ লিটার করে দুধ দিচ্ছে। আমি শুনলাম। ডায়মন্ডহারবারের দিকে নাকি। তাই শুনে কবিতাটি লিখে ফেললাম।
আমি বললাম, তুমি আমাদের হলুদ রবিবারের আড্ডায় কবিতাটি নিয়ে এসো। পাঠ করবে। পারলে ওই এঁড়ে গরুর দুধ নিয়ে এসো। চা করে খাওয়াবো।
ফোন কেটে দিয়ে মুখ দিয়ে ‘ শালা’ বেরিয়ে এলো।
তার ওপর আর এক তাজ্জব ব্যাপার। এক বান্ধবী আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটি অডিও পাঠিয়ে বললো, দাদা কী কান্ড দেখো। অমুক দিদির কান্ড। আর কার পল্লায় পড়েছে শোনো।
সত্যি সত্যি মিনিট দশেকের অডিওটি শোনার পর খুব একটা ভাবলাম, আহা আমায় যদি ওমন একটা পুরস্কার দিতো, এ সংকটকালে ফেসবুকের একটা ছবি হয়ে যেতো।
অডিওতে দুই মহিলার কথপোকথন। এক মহিলা ফেসবুকে পুরস্কার ও ডক্টরেট ডিগ্রি পাইয়ে দেওয়ার জন্য নাকি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তা দেখে এক মহিলা ওই পোস্টের মালকিনের কাছে বিষয়টি জানতে চান। এবং তিনি কায়দা করে তা রেকর্ডও করে রাখেন।
মোদ্দা কথা দিল্লি থেকে বড়ো মাপের পুরস্কার ও ডক্টরেট ডিগ্রি তিনি পাইয়ে দেবেন। তার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। ফি লাগবে দশ থেকে পঁচিশ হাজার। তা আগে ওই মহিলার একাউন্টে জমা করতে হবে।
তা জেনে উৎসুক মহিলা জানতে চান, তাহলে টাকার পরিমাণ কতো,তা জেনে তবেই তেমন পুরস্কার দেওয়া হবে এই তো?
শেষ পর্যন্ত কথা শেষ হলো। এবং একটু রগড়ে দিলেন পোস্টের মালকিনকে।
বুঝতে পারছেন। লকডাউন পর্বে কতো কী খেলা চলছে। সাহিত্য সংগঠনের নামে, সংবর্ধনা দেওয়ার নামে এই সব প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। এবং যিনি দেখাচ্ছেন,তিনিও নাকি কবি।
না, আমাদের আড্ডায় এমন কথা শুনে বন্ধুরা বললো, বাংলা কোবতে আর বাঙালি কোপির কী মহিমা। জয় বাবা ফেবুবাবার জয়।
(চলবে)