নিজস্ব সংবাদদাতা: রীতিমত পরিকল্পনা করেই এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে এক চিকিৎসককে। কারা যেন রটিয়ে দিয়েছে করোনা হয়েছে তাঁর। আর তার পরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে রোগী আসা। আয় তো মার খাচ্ছেই কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ পুরোপুরি এক ঘরে হয়ে পড়েছেন তিনি। কোনো গাঁ গঞ্জের ঘটনা নয়, ঘটনা শহরের। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরের! পরিকল্পনা মাফিক ছড়িয়ে দেওয়া এই গুজবের ঠেলায় অস্থির ডাক্তারবাবু। পরিচারিকা, গাড়ির চালক, মেয়ের গৃহশিক্ষক—সকলেই বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে ঘরবন্দি হয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে তমলুকের প্রখ্যাত শল্য চিকিৎসক সপরিবারে অলোক শী কে।
এক সময়ে তমলুক জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক আলোক শী ব্যক্তিগত ভাবে রোগী দেখার চাপে হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু এখন রোগী তো আসছেই না উল্টে এমন গুজব রটেছে যে পরিচারিকা থেকে মেয়ের মাস্টারমশাই কেউই ভিড়ছেন না জেলাশাসকের দফতরের পাশে ডাক্তারবাবুর বাড়িতে। তাঁর করোনা হয়নি। অথচ সারা তমলুক শহরেই রটে গিয়েছে, ডাক্তারবাবুর করোনা হয়েছে।
ডাক্তারবাবুর অভিযোগ, পরিকল্পনা করে এমন গুজব রটানো হয়েছে। এটা একটা চক্রান্ত। তাঁর কথায়, “এ তো দেখছি করোনার চেয়ে গুজব বেশি সংক্রামক।” তিনি বলেন, “আমার মেয়ের সামনে পরীক্ষা রয়েছে। মাস্টার মশাইরা আসা বন্ধ করে দেওয়ায় তীব্র সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।” গোটা ঘটনায় প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ। যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, “আমাদের বিষয়টি জানা ছিল না। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
করোনা নিয়ে সরকারের প্রচার স্বত্বেও বহু জায়গাতে ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ করোনা যুদ্ধের সামনের সারির যোদ্ধা দের। কোথাও কোথাও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনাও বাদ যাচ্ছে না। বিডিওকে পর্যন্ত পড়শিদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। এমনিতে এই সংকটের সময়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপারে বারবার সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের সম্মান জানাতে বিশেষ রুপোর ব্যাজও প্রদান করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তমলুকের চিকিৎসক এখন কার্যত সামাজিক বয়কটের শিকার। তিনি চাইছেন, প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে পুরো বিষয়টিকে স্বাভাবিক করুক।
এমনিতেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। হাজার ছড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই আক্রান্তের তালিকায় ষাট, সত্তর, একশ জনের নাম যুক্ত হচ্ছে। জেলার প্রতিটি শহরেরই অবস্থা কম বেশি খারাপ। একই অবস্থা তমলুকেরও। মানুষ এমনিতেই আতঙ্কগ্রস্ত তার ওপর এই গুজব ছড়িয়ে পড়ায় চিকিৎসকের বাড়ির ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে চাইছে না কেউই।