ওয়েব ডেস্ক : চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী ২০ লক্ষের মধ্যে এমন ঘটনা একটা ঘটে। একই হৃদয় অথচ দুই শরীর। ‘মায়ের পেট থেকে বেরোনোর সময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে’। এমন বিরল ঘটনা খুবই কম চোখে পড়ে৷ হৃদযন্ত্র জোড়া লেগে থাকা অবস্থাতেই কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে জন্ম নিল যমজ সন্তান। বেশ কয়েক বছর আগে একইভাবে পৃথিবীর আলো দেখেছিল ‘গঙ্গা-যমুনা’। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গত মঙ্গলবার বাগুইআটি-র বাসিন্দা বছর ২১ এর অনিমা ঘোষের অস্ত্রোপচার করেন এনআরএস এর চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, যমজ দুই সদ্যোজাত আপাতত এসএনসিইউ-তে ভেন্টিলেশন সাপোর্টের মধ্যে রয়েছে৷ বর্তমানে মা ও দুই মেয়ে তিনজনেই ভালো আছে।
করোনা পরিস্থিতিতে দুটি সম্পূর্ণ শরীর অথচ একটি হৃদযন্ত্র কিন্তু নিয়ে জন্মানো যমজ সদ্যোজাত স্বাভাবিকভাবেই এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এনআরএস কর্তৃপক্ষকে। কিভাবে এই বিরল যমজ শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায় তা নিয়েই এখন চিন্তিত প্রসূতি ও শিশু বিভাগের একদল চিকিৎসক। যমজ দুই শিশুর মস্তিষ্ক, হাত, পা, চোখ, নাক, মুখ সব আলাদা। শুধুমাত্র তাদের হৃদযন্ত্র একটা। আর সেই জোড়া লেগে থাকা হৃদযন্ত্রের মাধ্যমে দুটি শরীরে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘থোরাকফ্যাগাস’
চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই ওই দুই শিশুর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
এনআরএস হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত বুধবার ২২ জুলাই একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন ২১ বছরের অনিমা ঘোষ। চিকিৎসকদের দীর্ঘ প্রস্তুতির পর ওই প্রসূতিকে দেবরাজ বসুর নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক তনুশ্রী রায়, স্মৃতি রাজ, অনির্বান রায় সহ পুরো ইউনিট। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বলছে, প্রায় কয়েক লক্ষ সন্তানের মধ্যে এমন বিরল ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অবশেষে মঙ্গলবার ভূমিষ্ঠ হয় অনিমা দেবীর যমজ সন্তান। জন্মানোর পর দেখা যায় ওই ২ শিশুর শরীর আলাদা হলেও হৃদয় এক। আপাতত এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ওই প্রসূতি এবং তাঁর দুই সন্তান।
এবিষয়ে এনআরএস মেডিকেল কলেজের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক দেবরাজ বসু বলেন, “রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ওই যমজ শিশুর জন্মের পর এসএসসিইউ-তে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের অধীনে সযত্নে রাখা হয়েছে। মা ভালো আছেন। এধরনের কনজয়েনড টুইন বেবি খুবই বিরল। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ শিশু দুটিকে আলাদা করে সুস্থ জীবনে ফেরানো। কিছুদিন পর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে দেখা হবে হৃদযন্ত্রের অবস্থান। অতি জটিল বা জটিলতম অস্ত্রোপচার করে যমজ শিশু দুটিকে আলাদা করার পরিকল্পনা আছে। হৃদযন্ত্র একটি হলে অপেক্ষাকৃত যে শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা বেশি তার দিকে রেখে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। আমাদের এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মুখে দাঁড়িয়ে। অন্য শিশুটিকে বাঁচাতে দরকার সদ্যোজাতের উপযুক্ত হৃদযন্ত্র জোগাড় করে তা প্রতিস্থাপন। সেটা হয়তো সম্ভব নয়। আমাদের চিকিৎসকেরা সবরকম পরিকল্পনা করছেন।”
এই বিরল ঘটনায় কলকাতা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সুকান্ত দাস বলেন, “এ ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোটোকল আছে কিভাবে অস্ত্রোপচার করা হবে। বিষয়টি অত্যন্ত বিরল বললেও কম বলা হয়। এক্ষেত্রে একটি শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে সেক্ষেত্রে বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে সবটাই সিদ্ধান্ত নেবেন একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেখানে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, পেডিয়াত্রিক কার্ডিয়লজি, মেডিসিন এবং নিউরো ডক্টর থাকবেন। তবে এখনই নয়। কয়েক মাস পরে এই শিশুদের অস্ত্রপচার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও দেখতে হবে অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত হয়েছে কিনা।” সদ্যোজাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণ সিংহ বলেন, “অত্যন্ত জটিল বিষয়। একটি হার্ট, দুটি শিশু এমনটা দেখিনি। পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আরও সময় প্রয়োজন। শিশুকে আরেকটু বড় করতে হবে। যদি তারা বেঁচে থাকে তখনই পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ কিভাবে অস্ত্রোপচার করবে তারা ঠিক করবেন।”